ইউরোপ ভ্রমণের স্বপ্ন প্রতিটি ভ্রমণপ্রেমীর মনে একটি বিশেষ স্থান দখল করে থাকে। বিশেষ করে ইউরোপের সেনজেন জোনে ভ্রমণের সুবিধার জন্য এই অঞ্চলটি পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয়। তবে ইউরোপের সব দেশ সেনজেন চুক্তির আওতাভুক্ত নয়। সেনজেন এবং নন সেনজেন দেশগুলোর মধ্যে কী পার্থক্য, কোন সুবিধাগুলো আপনি পেতে পারেন, এবং কীভাবে এই দেশগুলো ভ্রমণ পরিকল্পনায় যুক্ত করবেন—এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আজকের এই নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সেনজেন এবং নন সেনজেন মূল ধারণা
ইউরোপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো—আপনার পছন্দের দেশটি কি সেনজেন জোনের অন্তর্ভুক্ত? সেনজেন এলাকা এমন একটি অঞ্চল যেখানে ২৭টি দেশ একক ভিসা চুক্তির আওতায় পরস্পরের সীমান্তে প্রবেশাধিকার সহজ করেছে। তবে সব ইউরোপীয় দেশ সেনজেন চুক্তির অংশ নয়।
সেনজেন চুক্তি কী?
সেনজেন চুক্তি প্রথম ১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গের একটি ছোট শহর “সেনজেন”-এ স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে আরও কয়েকটি দেশ এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তি অনুসারে, সেনজেনভুক্ত দেশগুলো নিজেদের সীমান্তে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোনও কড়াকড়ি আরোপ করে না। একবার সেনজেন ভিসা পেলেই আপনি চুক্তির আওতাভুক্ত যে কোনও দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ফ্রান্সের ভিসা নিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন, তবে একই ভিসা ব্যবহার করে জার্মানি, ইতালি, স্পেন এবং অন্যান্য সেনজেন দেশেও ভ্রমণ করতে পারবেন।
নন সেনজেন দেশ কী?
নন সেনজেন দেশ হলো সেই দেশগুলো, যেগুলো সেনজেন চুক্তির আওতাভুক্ত নয়। এই দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য আপনাকে আলাদাভাবে প্রতিটি দেশের জন্য পৃথক ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে।
ইউরোপের দেশ সংখ্যা ও সেনজেন-নন সেনজেন বিভাজন
ইউরোপ মহাদেশে বর্তমানে মোট দেশসংখ্যা ৫০। এর মধ্যে ২৭টি দেশ সেনজেন চুক্তির আওতাভুক্ত এবং বাকিগুলো নন সেনজেন।
২০২৪ সালের পরিসংখ্যান
- সেনজেন ভুক্ত দেশ: ২৭টি
- নন সেনজেন ভুক্ত দেশ: ২৩টি
নন সেনজেন দেশগুলো তাদের নিজস্ব ভিসা নীতি অনুসরণ করে। ফলে সেনজেন জোনের দেশগুলোর তুলনায় এই দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াত কিছুটা কঠিন।
ইউরোপের নন সেনজেন দেশের তালিকা
নন সেনজেন দেশগুলো ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এই দেশগুলো তাদের নিজস্ব আইন এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বজায় রাখে। ২০২৪ সালের তালিকা অনুসারে নন সেনজেন দেশগুলো হলো:
- আলবেনিয়া
- কসোভো
- ইউক্রেন
- মেসিডোনিয়া
- যুক্তরাজ্য
- লিশটেনস্টাইন
- মোল্দাভিয়া
- আন্দোরা
- আর্মেনিয়া
- রাশিয়া
- সার্বিয়া
- বেলারুশ
- বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
- মন্টেনেগ্রো
- সুইজারল্যান্ড (আংশিক সেনজেন বিধি প্রযোজ্য)
- ভ্যাটিকান সিটি
- জর্জিয়া
- মোনাকো
- সান মেরিনো
- তুরস্ক
- আইসল্যান্ড (সেনজেন চুক্তির সঙ্গে জড়িত, তবে স্বাধীন সীমান্ত নীতি)
- নরওয়ে (সেনজেন চুক্তির সঙ্গে জড়িত, তবে নিজস্ব বিধি অনুসরণ করে)
- স্লোভাকিয়া
নন সেনজেন দেশগুলোর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রতিটি পর্যটকের জন্য অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়।
ইউরোপের সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা (২০২৪)
সেনজেন চুক্তির আওতায় থাকা দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে মুক্ত সীমান্ত সুবিধা প্রদান করে। ২০২৪ সালে সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর তালিকা হলো:
- ক্রোয়েশিয়া
- স্লোভেনিয়া
- পর্তুগাল
- ফ্রান্স
- স্লোভাকিয়া
- আইসল্যান্ড
- ফিনল্যান্ড
- সুইডেন
- বেলজিয়াম
- জার্মানি
- সুইজারল্যান্ড
- এস্তোনিয়া
- অস্ট্রিয়া
- হাঙ্গেরি
- গ্রীস
- লুক্সেমবার্গ
- নরওয়ে
- পোল্যান্ড
- চেক প্রজাতন্ত্র
- ডেনমার্ক
- লিচেনস্টাইন
- লাটভিয়া
- স্পেন
- ইতালি
- লিথুয়ানিয়া
- নেদারল্যান্ডস
- মাল্টা
সেনজেন বনাম নন সেনজেন
সেনজেন ভুক্ত দেশের সুবিধা
- একক ভিসা নীতি: একটি ভিসা দিয়ে ২৭টি দেশে ভ্রমণ সম্ভব।
- মুক্ত সীমান্ত নীতি: সেনজেন দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াতে সীমান্ত পাসিং প্রক্রিয়া সহজ।
- অর্থনৈতিক সুবিধা: একাধিক দেশ ঘোরার জন্য অতিরিক্ত ভিসা ফি দিতে হয় না।
- সুবিধাজনক ভ্রমণ: ট্রেন, গাড়ি, বা ফ্লাইটে সহজে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া যায়।
নন সেনজেন দেশের অসুবিধা
- আলাদা ভিসার প্রয়োজন: প্রতিটি দেশের জন্য ভিন্ন ভিসা আবেদন করতে হয়।
- সীমান্ত কঠোরতা: দেশের মধ্যে প্রবেশে কাগজপত্র ও ভিসা যাচাই কঠিন।
- উচ্চ খরচ: প্রতিটি দেশের জন্য ভিসা ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বেশি।
শেষ কথা
ইউরোপ ভ্রমণের সময় সেনজেন এবং নন সেনজেন দেশের তালিকা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেনজেন ভুক্ত দেশগুলোর একক ভিসা সুবিধা ভ্রমণকারীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর, তবে নন সেনজেন দেশগুলোরও নিজস্ব সৌন্দর্য এবং আকর্ষণ রয়েছে। আপনি যদি ইউরোপীয় দেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তবে এই তালিকা দেখে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে নিন এবং ভ্রমণকে উপভোগ করুন।
