তেল মানব সভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। রান্না থেকে শুরু করে যানবাহন এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠানে শক্তি সরবরাহের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অপরিহার্য। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতি বছর বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ পরিশোধিত এবং অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়। বিশেষত সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত থেকে আমদানিকৃত তেল বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তেলের বর্তমান মূল্য, এর ধরণ এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এই নিবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত তেলের দামের ওঠানামা এবং স্থানীয় বাজারে তার প্রভাব নিয়েও বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে।
তেলের আমদানির হালচাল
বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬.৫১ মিলিয়ন মেট্রিক টন পরিশোধিত তেল আমদানি করে। তেলের এই বিপুল পরিমাণ চাহিদা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করে।
বিশেষত আরব আমিরাত থেকে আমদানিকৃত ১.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধিত হয়। এরপরে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী এটি বাজারজাত করা হয়। এতে দেশের যানবাহন, কৃষি, শিল্প এবং গৃহস্থালির জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয়।
বাংলাদেশে আজকের তেলের দাম
বাংলাদেশে তেলের মূল্য নির্ধারণ আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এছাড়া পরিবহন খরচ, রিফাইনারি খরচ এবং স্থানীয় করও তেলের দামের ওপর প্রভাব ফেলে। নিচে তেলের বিভিন্ন ক্যাটাগরির বর্তমান মূল্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
১. পেট্রোলের বর্তমান দাম
পেট্রোল যানবাহনের ইঞ্জিন চালানোর জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি উচ্চগতিসম্পন্ন যানবাহনে কার্যকরী, কারণ এটি ইঞ্জিনের স্থায়িত্ব বাড়ায়।
- পূর্বের মূল্য: প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ছিল ১২৭ টাকা।
- বর্তমান মূল্য: প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম কমিয়ে ১২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
- কারণ: আন্তর্জাতিক বাজারে দামের হ্রাস এবং স্থানীয় চাহিদার সমন্বয়।
২. ডিজেলের দাম
ডিজেল ভারী যানবাহন যেমন ট্রাক, বাস, এবং কৃষি যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়। এটি কম খরচে অধিক শক্তি উৎপাদন করে।
- বর্তমান মূল্য: প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা।
- উপযোগিতা: ভারী শিল্প এবং গণপরিবহনে ডিজেল অপরিহার্য।
৩. অকটেনের দাম
অকটেন মূলত পেট্রোলের একটি উন্নতমানের সংস্করণ। এটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
- পূর্বের মূল্য: প্রতি লিটার অকটেনের দাম ছিল ১৩১ টাকা।
- বর্তমান মূল্য: প্রতি লিটার অকটেনের দাম কমিয়ে ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
৪. কেরোসিন তেলের দাম এবং এর প্রয়োগ
কেরোসিন একসময় দেশের গ্রামাঞ্চলে আলো জ্বালানোর প্রধান উপায় ছিল। বর্তমানে এটি বিমান পরিচালনার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- বর্তমান মূল্য: প্রতি লিটার কেরোসিনের দাম ১০৫ টাকা।
- উপযোগিতা: এর বহুমুখী ব্যবহার একে অত্যন্ত কার্যকরী করে তুলেছে।
বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের দাম
বাংলাদেশের খাদ্যশিল্পে সয়াবিন তেল অন্যতম প্রধান উপাদান। বাজারে বিভিন্ন মানের সয়াবিন তেল পাওয়া যায়, যা স্থানীয় চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল।
- খোলা সয়াবিন তেলের দাম:
- সর্বনিম্ন: প্রতি লিটার ১৫০-১৫৫ টাকা।
- সর্বোচ্চ: প্রতি লিটার ১৬০-১৭০ টাকা।
- বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম:
- সর্বনিম্ন: প্রতি লিটার ১৮৫-১৯০ টাকা।
- ৫ লিটারের বোতল: ৯২৫-৯৫০ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত দামের ওঠানামা
বাংলাদেশে তেলের দাম অনেকাংশেই আন্তর্জাতিক বাজারের দামের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ে। এছাড়া ডলারের বিনিময় হার এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক নীতিমালাও তেলের দামের ওঠানামার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।
তেলের দামের ওপর স্থানীয় বাজারের প্রভাব
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সরবরাহ ব্যবস্থাও তেলের দামের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। চাহিদা বেশি থাকলে এবং সরবরাহ সীমিত হলে দামের বৃদ্ধি হয়। একইভাবে, সরবরাহ বেশি থাকলে এবং চাহিদা কম থাকলে দামের হ্রাস ঘটে
শেষ কথা
তেলের দামের পরিবর্তন শুধু একজন ভোক্তার পকেটকেই প্রভাবিত করে না, এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তাই এই বিষয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।