বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে ধান হলো এক অমূল্য সম্পদ। আমাদের খাদ্যশস্যের প্রধান উৎসই হচ্ছে ধান। কিন্তু অনেক সময় সাধারণ মানুষ কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ধান কিনতে চাইলে সঠিক বাজার দর জানেন না। বিশেষ করে এক মন ধান কত টাকা বা এক কেজি ধানের দাম কত, এ নিয়ে বিভ্রান্তি থেকেই যায়। এই দীর্ঘ প্রতিবেদনে আমরা ধানের বর্তমান বাজার দর, বিভিন্ন জাতভেদে মূল্য, সরকারি ক্রয়মূল্যসহ সবকিছু বিশদভাবে আলোচনা করবো।
বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের গুরুত্ব
বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। দেশের অধিকাংশ কৃষকই ধান চাষের সঙ্গে জড়িত। তিন মৌসুমে (আউশ, আমন, বোরো) ধানের চাষাবাদ হয়ে থাকে।
- খাদ্য নিরাপত্তা : দেশের প্রধান খাদ্য চাল হওয়ায় ধান ছাড়া বাঙালির খাবার কল্পনা করা যায় না।
- অর্থনৈতিক অবদান : কৃষকের আয়ের বড় একটি অংশ আসে ধান বিক্রির মাধ্যমে।
- কৃষি শিল্পে ভূমিকা : চালের মিল, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহনসহ নানা খাতে ধান ও চালের উপর নির্ভরতা রয়েছে।
তবে ধানের মূল্য নির্ধারণে অঞ্চলভেদে ও জাতভেদে ভিন্নতা দেখা যায়।
এক মন ধানের দাম কত ২০২৫
বাংলাদেশে বর্তমানে ধানের দাম দুটি ওজন মাপে নির্ধারণ করা হয়—
- ২৯ কেজি = ১ মন (কিছু অঞ্চলে প্রচলিত)
- ৪০ কেজি = ১ মন (বেশিরভাগ বাজারে প্রচলিত)
২০২৫ সালের বাজার অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে:
ধানের পরিমাণ | ২৯ কেজি মন | ৪০ কেজি মন |
---|---|---|
১ মন ধান | ৭৫০ – ৮৫০ টাকা | ১,২০০ – ১,৪৫০ টাকা |
২ মন ধান | ১,৫০০ – ১,৭০০ টাকা | ২,৪০০ – ২,৯০০ টাকা |
৫ মন ধান | ৩,৭০০ – ৪,২০০ টাকা | ৬,০০০ – ৭,০০০ টাকা |
১০ মন ধান | ৭,৪০০ – ৮,৫০০ টাকা | ১২,০০০ – ১৪,০০০ টাকা |
মূল্য ওঠানামার কারণ হলো—জাত, বাজারের চাহিদা, মৌসুম এবং সরকারি নীতিমালা।
জনপ্রিয় ধানের জাত ও দাম ২০২৫
মিনিকেট ধানের দাম
- বাস্তবতা : মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই। আসলে বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ ধানকে বিশেষ প্রসেসিং ও পালিশ করে মিনিকেট চাল তৈরি করা হয়।
- দাম :
- ১ কেজি ধান: ২৮ – ৩১ টাকা
- ৪০ কেজি মন: ১,২০০ – ১,৪৫০ টাকা
২৮ ধানের দাম
- বৈশিষ্ট্য: চিকন, ভাত ঝরঝরে হয় এবং দীর্ঘসময় নষ্ট হয় না।
- দাম:
- ২৯ কেজি মন: ৮০০ – ৮৫০ টাকা
- ৪০ কেজি মন: ১,২০০ – ১,৩০০ টাকা
২৯ ধানের দাম
- বৈশিষ্ট্য: সুগন্ধযুক্ত, খেতে নরম ও ঝরঝরে।
- দাম:
- ২৯ কেজি মন: ৭৫০ – ৮০০ টাকা
- ৪০ কেজি মন: ১,১০০ – ১,২০০ টাকা
স্বর্ণা ও মোটা ধানের দাম
- বৈশিষ্ট্য: চাল মোটা হয়, ভাত তুলনামূলক সস্তা।
- দাম:
- ২৯ কেজি মন: ৭০০ – ৭৫০ টাকা
- ৪০ কেজি মন: ১,০৫০ – ১,১০০ টাকা
১ কেজি ধানের দাম কত ২০২৫
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি কেজি ধানের দাম জাতভেদে ২৪ টাকা থেকে ৩২ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।
- মোটা ধান (স্বর্ণা): ২৪ – ২৬ টাকা
- বিআর-২৯ ধান: ২৬ – ২৮ টাকা
- বিআর-২৮ ধান: ২৮ – ৩০ টাকা
- মিনিকেট (প্রসেসকৃত): ৩০ – ৩২ টাকা
সরকারি ধানের ক্রয়মূল্য ২০২৫
সরকার কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিবছর ধান ও চাল ক্রয় করে থাকে।
- ২০২৫ সালের সরকারি মূল্য: প্রতি কেজি ধান ৩০ টাকা
- কৃষক সরাসরি সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করলে বাজারের তুলনায় ২–৩ টাকা বেশি দাম পায়।
আজকের ধানের বাজার দর (বাংলাদেশ ২০২৫)
আজকের সর্বশেষ বাজার তথ্য অনুযায়ী:
- ২৯ কেজি মন : ৭৫০ – ৮৫০ টাকা
- ৪০ কেজি মন : ১,২০০ – ১,৪৫০ টাকা
- ১ কেজি ধান : ২৪ – ৩২ টাকা
ধানের দামের তারতম্যের কারন
ধানের বাজারমূল্য কখনও স্থিতিশীল থাকে না। নানা কারণে দাম পরিবর্তিত হয়:
- মৌসুম – আমন, আউশ বা বোরো মৌসুমে দাম ভিন্ন হয়।
- জাতভেদ – চিকন চালের ধানের দাম বেশি, মোটা চালের দাম তুলনামূলক কম।
- অঞ্চলভেদ – উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণাঞ্চল বা হাওর এলাকায় আলাদা আলাদা দর প্রচলিত।
- চাহিদা ও যোগান – বাজারে ধান বেশি থাকলে দাম কমে যায়, আর ঘাটতি হলে দাম বেড়ে যায়।
- সরকারি নীতিমালা – সরকারি ক্রয় কার্যক্রম দাম নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্ন: ধান মন কত টাকা ২০২৫ সালে?
উত্তর: বর্তমানে ২৯ কেজির এক মন ধান ৭৫০–৮৫০ টাকা এবং ৪০ কেজির এক মন ধান ১,২০০–১,৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রশ্ন: ১ কেজি ধানের দাম কত?
উত্তর: জাতভেদে ২৪ থেকে ৩২ টাকা পর্যন্ত।
প্রশ্ন: মিনিকেট ধান কি আলাদা জাত?
উত্তর: না, মিনিকেট নামে আলাদা কোনো ধানের জাত নেই। এটি মূলত বিআর-২৮ বা বিআর-২৯ ধানকে মেশিনে পালিশ করে তৈরি করা হয়।
প্রশ্ন: সরকারি ধানের রেট কত ২০২৫ সালে?
উত্তর: সরকারিভাবে ধানের ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ৩০ টাকা।
শেষ কথা
ধান বাংলাদেশের প্রাণ। কৃষকের ঘাম আর পরিশ্রমে যে ধান উৎপাদিত হয়, সেটি আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন। কিন্তু ধানের দাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকলে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তাই ধান কেনাবেচার আগে সর্বশেষ বাজার দর জেনে নেয়া জরুরি।
আজকের আলোচনায় আমরা দেখলাম—এক কেজি ধানের দাম কত, এক মন ধানের দাম কত, বিভিন্ন জাতভেদে মূল্য এবং সরকারি নির্ধারিত রেট কেমন। ২০২৫ সালের জন্য ধানের বাজার দর ৭০০ টাকা থেকে ১,৪৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে।
ধান ক্রয়-বিক্রয়ে সঠিক তথ্য জানা থাকলে কৃষক যেমন ন্যায্য দাম পাবেন, তেমনি ক্রেতারাও উপকৃত হবেন।