পোল্ট্রি ফিড দাম কত ২০২৫

বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির অন্যতম প্রাণশক্তি হলো পোল্ট্রি শিল্প। এটি শুধু দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখছে না, বরং লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। ডিম, মাংস ও অন্যান্য প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহে এই খাতের ভূমিকা অপরিসীম। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিডের (খাদ্য) মূল্যবৃদ্ধি এই শিল্পের জন্য একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একজন খামারির কাছে ফিডের দাম মানে শুধু খরচ নয় — এটি তার লাভ-ক্ষতির সীমারেখা নির্ধারণ করে। ফিডের দাম বৃদ্ধি মানে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, আর এর ফলে বাজারে মুরগির মাংসের দামেও ওঠানামা দেখা দেয়।

এই প্রবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব—

  • বাংলাদেশের বর্তমান পোল্ট্রি ফিড বাজারের চিত্র,
  • বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফিডের আপডেটেড মূল্য,
  • ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি জাতের ফিডের পার্থক্য ও উপকারিতা,
  • এবং ফিড ক্রয়ের সময় খামারিদের বিবেচনা করা জরুরি বিষয়গুলো।

বর্তমান বাজারে পোল্ট্রি ফিডের গড় মূল্য

২০২৫ সালের অক্টোবরে এসে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে ফিডের দাম অন্তত চার থেকে পাঁচবার বেড়েছে। ছোট খামারিরা এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

নিচে জনপ্রিয় কয়েকটি কোম্পানির ফিডের আপডেটেড দাম উপস্থাপন করা হলোঃ

কোম্পানির নামফিডের ধরনপ্যাকেট সাইজগড় দাম (টাকা)
প্যারাগন ফিডলেয়ার ফিড৫০ কেজি৩,৪০০ – ৩,৫০০
লেয়ার লেয়ার ১লেয়ার ফিড৫০ কেজি২,৯০০ – ৩,১০০
কাজী ফিডলেয়ার ফিড৫০ কেজি৩,৪৫০ – ৩,৫০০
আফতাব ফিডব্রয়লার ফিড৫০ কেজি২,৯০০ – ২,৯৫০
সোনালী স্টার্টারস্টার্টার ফিড৫০ কেজি৩,৫০০ – ৩,৬৫০

বর্তমানে ১ কেজি ফিডের দাম ৭০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে, যা দুই বছর আগের তুলনায় প্রায় ২৫% বৃদ্ধি নির্দেশ করে।

ব্রয়লার মুরগির ফিডের প্রকারভেদ ও তাদের ভূমিকা

১. স্টার্টার ফিড

  • ব্যবহারকাল: প্রথম ১ থেকে ২১ দিন।
  • উপাদান: ২২–২৪% প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও অ্যামিনো অ্যাসিড।
  • উপকারিতা: দ্রুত বৃদ্ধি ও অস্থি গঠনে সহায়তা করে।

২. গ্রোয়ার ফিড

  • ব্যবহারকাল: ২২ থেকে ৩৫ দিন পর্যন্ত।
  • উপাদান: ২০–২১% প্রোটিন, যথাযথ ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট।
  • উপকারিতা: মাংসের গঠন ও পেশির দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে।

৩. ফিনিশার ফিড

  • ব্যবহারকাল: শেষ ৫ থেকে ১০ দিন।
  • উপাদান: ১৮–১৯% প্রোটিন, অধিক এনার্জি উপাদান।
  • উপকারিতা: বাজারজাতকরণের আগে মাংসের মান উন্নত করে ও রঙে উজ্জ্বলতা আনে।

ফিডের গুণগত মান নির্ধারণের কৌশল

একজন সচেতন খামারি হিসেবে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কীভাবে ভালো মানের ফিড চেনা যায়। নিচে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হলোঃ

  1. গন্ধ ও রঙ পরীক্ষা করুন: ভালো ফিডের গন্ধ সতেজ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
  2. দানা আকারে সমান কিনা দেখুন: অনিয়মিত দানার ফিডে পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হয়।
  3. কোনো ছত্রাক বা আর্দ্রতা আছে কিনা নিশ্চিত করুন।
  4. ল্যাব টেস্ট রিপোর্ট বা গুণগত সনদপত্র থাকলে তা যাচাই করুন।

ফিড ক্রয়ের সময় করণীয় ও বিবেচ্য বিষয়

ফিড কেনার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খামারিদের অবশ্যই মাথায় রাখা উচিতঃ

  • মূল্য তুলনা করুন: একই ধরনের ফিড বিভিন্ন ব্র্যান্ডে ভিন্ন দামে পাওয়া যায়।
  • বিশ্বস্ত সরবরাহকারী থেকে কিনুন: নকল বা নিম্নমানের ফিড থেকে বিরত থাকুন।
  • সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখুন: ফিড আর্দ্র বা ভেজা পরিবেশে রাখলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • বাল্কে ক্রয় করলে ডিসকাউন্ট নিন: বড় পরিমাণে কিনলে কোম্পানিগুলো প্রায়ই বিশেষ ছাড় দেয়।

শেষ কথা

পোল্ট্রি শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক অনন্য অবদান রাখছে। তবে এই শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য ফিডের দাম, মান, ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা একসাথে ভারসাম্য রাখতে হবে।

আমাদের এই বিস্তারিত বিশ্লেষণটি আপনাকে বাংলাদেশের বর্তমান পোল্ট্রি ফিডের দাম, বাজার প্রবণতা, এবং সঠিক ব্র্যান্ড নির্বাচনে সহায়তা করবে। নতুন উদ্যোক্তা হোন বা অভিজ্ঞ খামারি—এই তথ্যগুলো আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিশ্চয়ই কাজে লাগবে।

পোল্ট্রি খাতে সচেতন বিনিয়োগ ও পরিকল্পিত ফিড ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে বাংলাদেশ আরও আত্মনির্ভর ও সমৃদ্ধ হবে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top