দক্ষিণ কোরিয়া, পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রগতিশীল রাষ্ট্র, তার প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা, উন্নত অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানের কারণে বিশেষভাবে আলোচিত। দেশটির রাজধানী সিউল শুধু রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক কেন্দ্র নয়; বরং এটি এশিয়ার অন্যতম আর্থিক হাব এবং সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র। দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রায়ই “টাইগার ইকোনমি” বা “ব্যাঘ্র অর্থনীতি” বলা হয়, কারণ দেশটি অল্প সময়ে অবিশ্বাস্য অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ থেকে অনেকেই শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় ভ্রমণ করেন। তাই মুদ্রা বিনিময় হার এবং এর ওঠানামা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরি। এই নিবন্ধে আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা “ওন (KRW)” এবং বাংলাদেশি টাকার (BDT) সাথে এর সম্পর্কিত বিষয়গুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।
দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা “ওন (KRW)” এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি মুদ্রা হলো “ওন” (₩), যার আন্তর্জাতিক সংক্ষিপ্ত রূপ হলো KRW।
- এক ওনকে ছোট এককে ভাঙা সম্ভব নয়, কারণ বর্তমানে “জন” বা “রি” নামক উপএকক আর ব্যবহৃত হয় না।
- দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা মূলত কয়েন এবং নোট উভয় আকারে প্রচলিত।
কয়েন সমূহ: ₩10, ₩50, ₩100, ₩500
নোট সমূহ: ₩1,000, ₩5,000, ₩10,000, ₩50,000
দক্ষিণ কোরিয়ার ওনের সাথে বাংলাদেশি টাকার বিনিময় হার
বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ভ্রমণ বা কাজের জন্য গেলে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্ন ওঠে তা হলো— ১ কোরিয়ান ওন সমান কত বাংলাদেশি টাকা?
গত কয়েক বছরে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে ওনের মান তুলনামূলক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
- পাঁচ বছর আগে, ১ ওনের মান ছিল প্রায় ০.০৭৬ টাকা
- বর্তমানে (২০২4 সালের ডিসেম্বরে) ১ ওনের মান দাঁড়িয়েছে প্রায় ০.০৮৬ টাকা
এর অর্থ হলো দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ার সাথে সাথে ওনের মানও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ওন টু বাংলাদেশি টাকা একটি বিনিময় তালিকা
নিচে একটি সাধারণ রূপান্তর তালিকা দেওয়া হলো যা বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য সহায়ক হতে পারে:
| কোরিয়ান ওন (KRW) | বাংলাদেশি টাকা (BDT) |
|---|---|
| ১ ওন | ০.০৮৬ টাকা (প্রায়) |
| ১০ ওন | ০.৮৬ টাকা (প্রায়) |
| ৫০ ওন | ৪.৩০ টাকা (প্রায়) |
| ১০০ ওন | ৮.৬০ টাকা (প্রায়) |
| ৫০০ ওন | ৪৩ টাকা (প্রায়) |
| ১০০০ ওন | ৮৬ টাকা (প্রায়) |
| ৫০০০ ওন | ৪৩০ টাকা (প্রায়) |
| ১০,০০০ ওন | ৮৬০ টাকা (প্রায়) |
| ৫০,০০০ ওন | ৪,৩০০ টাকা (প্রায়) |
মনে রাখতে হবে, বাজারভেদে ওনের মান প্রতিদিন পরিবর্তিত হয়। তাই লেনদেনের সময় সর্বশেষ রেট যাচাই করা অপরিহার্য।
আজকের দিনে দক্ষিণ কোরিয়ার ১ ওনের মান
বাংলাদেশি টাকার সাথে কোরিয়ান ওনের মান প্রতিদিন বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ওঠানামা করে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে গড়পড়তা দেখা গেছে—
১ KRW ≈ ০.০৮৬ BDT
তবে ব্যাংক, মানি এক্সচেঞ্জ হাউস বা অনলাইন লেনদেন প্ল্যাটফর্ম অনুযায়ী এ হার কিছুটা বেশি বা কম হতে পারে।
কেন দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা তুলনামূলক শক্তিশালী?
দক্ষিণ কোরিয়ার ওনের স্থিতিশীলতার পেছনে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। চলুন তা বিস্তারিত দেখি:
১. প্রযুক্তি খাতের প্রভাব
স্যামসাং, এলজি, হুন্ডাইয়ের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস। প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স খাত দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী করেছে।
২. গাড়ি নির্মাণ শিল্প
হুন্ডাই এবং কিয়া’র মতো ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক বাজারে দক্ষিণ কোরিয়ার সুনাম বৃদ্ধি করেছে। গাড়ি রপ্তানির মাধ্যমে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
৩. স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ
একটি সুসংগঠিত প্রশাসনিক কাঠামো এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ায়।
৪. শিক্ষা ও গবেষণা
দক্ষিণ কোরিয়া শিক্ষা এবং গবেষণায় বিশাল বিনিয়োগ করে, যার ফলে উচ্চমানের মানবসম্পদ তৈরি হয়। এর প্রতিফলন অর্থনীতিতে পড়ে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে ওনের অবস্থান
যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা বিশ্বের শীর্ষ রিজার্ভ মুদ্রার তালিকায় নেই, তবুও এটি একটি স্থিতিশীল এবং আঞ্চলিকভাবে শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত।
- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, তেলের দাম বৃদ্ধি, কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হারের পরিবর্তন ওনের মানে প্রভাব ফেলে।
- তবে দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতি এ পরিবর্তনগুলিকে অনেকাংশে সামাল দিতে সক্ষম।
বাংলাদেশি ভ্রমণকারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য মুদ্রা বিনিময় নির্দেশিকা
বাংলাদেশ থেকে যারা দক্ষিণ কোরিয়ায় যান, তাদের জন্য মুদ্রা বিনিময় প্রক্রিয়ায় কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:
- ব্যাংক থেকে বিনিময়: বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রা কেনা সম্ভব।
- মানি এক্সচেঞ্জ হাউস: ঢাকার মত বড় শহরে অনুমোদিত এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো নির্ভরযোগ্য।
- কার্ড ব্যবহার: ভিসা বা মাস্টারকার্ড আন্তর্জাতিক কার্ড ব্যবহার করে সহজে টাকা তোলা যায়।
- প্রবণতা যাচাই: প্রতিদিনের বিনিময় হার যাচাই করে সঠিক সময়ে লেনদেন করা উচিত।
বাংলাদেশের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি
বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হলেও দক্ষিণ কোরিয়া মূলত শিল্প ও প্রযুক্তিনির্ভর।
- বাংলাদেশে জনসংখ্যা বেশি হলেও মাথাপিছু আয় দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় অনেক কম।
- দক্ষিণ কোরিয়ার মাথাপিছু আয় (২০২৩ সালে) ছিল প্রায় $৩৪,০০০, যেখানে বাংলাদেশে এটি প্রায় $২,৮০০।
দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা বিনিময় হারের ভবিষ্যৎ প্রবণতা
বিভিন্ন অর্থনৈতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী:
- প্রযুক্তি ও রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতির কারণে ওন দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল থাকবে।
- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট বা যুদ্ধ পরিস্থিতি এ মুদ্রার মানে প্রভাব ফেলতে পারে।
- ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের প্রসার ভবিষ্যতে কোরিয়ার অর্থনীতিকে আরও বৈচিত্র্যময় করবে।
শেষ কথা
দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা ওন (KRW) আন্তর্জাতিক বাজারে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। বাংলাদেশ থেকে যারা পড়াশোনা, চাকরি বা ব্যবসার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় যান, তাদের জন্য ওনের বর্তমান বিনিময় হার জানা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিনের হার বাজারভেদে ওঠানামা করে, তাই ব্যাংক বা অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ থেকে সর্বশেষ রেট জানা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়।



