প্রতিটি নতুন বাজেটের সাথে সিগারেট এবং তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ২০২৪ সালের বাজেটও এর ব্যতিক্রম নয়, যেখানে সিগারেটের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন যে সিগারেটের দাম বাড়ানোর মূল উদ্দেশ্য হলো জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শুল্ক আদায় বৃদ্ধি। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তামাক পণ্যের ব্যবহার হ্রাস করার পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে সিগারেট ব্যবসায়ী এবং ধূমপায়ীরা একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। নতুন বাজেটে তামাক পণ্যের দাম বৃদ্ধি ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি করছে, আর ধূমপায়ীদের জন্য সিগারেট কেনা এখন আরও ব্যয়বহুল হতে যাচ্ছে।
বাজেটের প্রভাব সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধির কারণ ও উদ্দেশ্য
তামাক পণ্যের উপর কর বৃদ্ধির লক্ষ্য
প্রতিটি বাজেটে তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানোর পেছনে সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো তামাক ব্যবহার হ্রাস করা। স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর জন্য এবং জনগণকে ধূমপান থেকে দূরে রাখার জন্য তামাকজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করাকে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া, সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য তামাকজাত পণ্যের উপর কর বৃদ্ধির কৌশলটিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাজেটে সিগারেটের দাম বৃদ্ধি করার মাধ্যমে অতিরিক্ত শুল্ক আদায় সম্ভব হয়, যা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা বা অন্যান্য উন্নয়নমূলক খাতে বিনিয়োগ করা হয়।
নতুন বাজেটে সিগারেটের দাম কত ২০২৪ সালের তথ্য
২০২৪ সালের বাজেটে বিভিন্ন মানের সিগারেটের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন, মধ্যম, এবং উচ্চমানের সিগারেটের দাম নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তা আগের চেয়ে বেশ খানিকটা বেশি। এর ফলে সিগারেট ব্যবহারকারী এবং বিক্রেতারা উভয়েই পরিবর্তিত মূল্যের কারণে প্রভাবিত হবেন।
নিচে ২০২৪ সালের বাজেট অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সিগারেটের দাম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:
১. সর্বনিম্ন স্তরের সিগারেট
২০২৪ সালের বাজেটে সর্বনিম্ন স্তরের সিগারেট, যা সাধারণত ১০ শলাকার প্যাকেটে পাওয়া যায়, তার দাম ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্বে এই প্যাকেটের দাম ছিল ৩৯ টাকা, যা এবার ৫৮% সম্পূরক শুল্কসহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই ধরনের সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধির মূল লক্ষ্য হলো নিম্ন আয়ের মানুষদের ধূমপান থেকে নিরুৎসাহিত করা।
২. মধ্যম স্তরের সিগারেট
মধ্যম মানের সিগারেটের ক্ষেত্রে ১০ শলাকার প্যাকেটের দাম এখন ৬৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগের দাম ছিল কিছুটা কম, যা এবার অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুসারে বেড়েছে। এই স্তরের সিগারেটের উপরও ৬৫% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
৩. উচ্চমানের সিগারেট
উচ্চমানের সিগারেট, যা সাধারণত উচ্চ আয়ের মানুষদের মধ্যে জনপ্রিয়, তার ১০ শলাকার প্যাকেটের দাম ১১৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ধরনের সিগারেটের উপরও ৬৫% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা পূর্বের তুলনায় বেশ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।
৪. অতি উচ্চমানের সিগারেট
সবচেয়ে দামী এবং বিলাসবহুল সিগারেটের মধ্যে অতি উচ্চমানের সিগারেটের দাম ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ধরনের সিগারেট মূলত উচ্চ আয়ের ধূমপায়ীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এর উপরও ৬৫% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বিড়ির দাম বৃদ্ধি ২০২৪ সালের বাজেটের প্রভাব
সিগারেটের পাশাপাশি, হাতে তৈরি বিড়ির দামও নতুন বাজেটে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিল্টারবিহীন হাতে তৈরি বিড়ির ২৫ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮ টাকা, ১২ শলাকার মূল্য ৯ টাকা এবং ৮ শলাকার মূল্য ৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ধরনের বিড়ির উপর ৩০% সম্পূরক শুল্ক অব্যাহত রাখা হয়েছে। ফলে বিড়ির ক্রেতা ও বিক্রেতারাও নতুন দাম ও করের ভারে প্রভাবিত হবেন।
বেনসন সিগারেটের দাম ২০২৪ সালে কত হলো
বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে বেনসন সিগারেটের দাম বেশ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। পূর্বে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেটের দাম ছিল ২৭০ টাকা, যা এবার নতুন বাজেটে ৩২০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি প্যাকেটে ২০ টি শলাকা রয়েছে, যার এক পিসের মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১৬ টাকা। এই মূল্যবৃদ্ধি ধূমপায়ীদের উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত যারা নিয়মিত এই ধরনের সিগারেট সেবন করে থাকেন।
বেনসন সিগারেটের বর্তমান মূল্যতালিকা:
পরিমাণ | বর্তমান মূল্য |
---|---|
১ পিস | ১৬ টাকা |
২ পিস | ৩২ টাকা |
৫ পিস | ৮০ টাকা |
১০ পিস | ১৬০ টাকা |
২০ পিস | ৩২০ টাকা |
সিগারেট ব্যবসায়ীদের উপর প্রভাব
নতুন বাজেটে সিগারেটের দাম বৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিগারেট বিক্রেতাদের এখন এই মূল্যবৃদ্ধির সাথে মানিয়ে নিতে হবে। ক্রেতাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাস পেতে পারে, কারণ উচ্চমূল্যের কারণে অনেকেই সিগারেট কিনতে অস্বস্তি বোধ করবেন। ফলে বিক্রেতারা বিক্রিতে হ্রাস দেখতে পারেন, যা তাদের আয়েও প্রভাব ফেলবে। এ কারণে সিগারেট ব্যবসায়ীরা বিক্রির ক্ষেত্রে বিকল্প পন্থা বা কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন, যেমন—ছাড় দেওয়া বা ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য নতুন মার্কেটিং কৌশল প্রয়োগ করা।
ধূমপায়ীদের উপর প্রভাব
ধূমপায়ীদের জন্য সিগারেটের দাম বাড়া একটি বড় আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে যারা প্রতিদিনের ভিত্তিতে সিগারেট সেবন করেন, তাদের জন্য এই মূল্যবৃদ্ধি ধূমপানের অভ্যাসে প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকেই হয়তো সিগারেটের ব্যবহার কমিয়ে দিতে পারেন বা কম দামের বিকল্প খুঁজতে পারেন। অন্যদিকে, কেউ কেউ ধূমপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যা সরকারের স্বাস্থ্যনীতি অনুসারে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।
শেষ কথা
২০২৪ সালের বাজেটে সিগারেট এবং অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের উপর নতুন দাম এবং শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ধূমপায়ী ও ব্যবসায়ীরা উভয়ই নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে সরকারের এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করার প্রধান উদ্দেশ্য। নতুন বাজেট অনুযায়ী সিগারেটের দাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ও ধূমপায়ীরা সামনের দিনে তাদের পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
এই মূল্যবৃদ্ধি ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে সহায়ক হবে, যদিও এর ফলে আর্থিক চাপের মুখোমুখি হতে হবে অনেককেই। সিগারেটের দাম বৃদ্ধি স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ অনেকেই হয়তো তাদের ধূমপানের অভ্যাস পরিবর্তন করতে বাধ্য হবেন। তবে শেষ পর্যন্ত, এই পদক্ষেপটি সরকারের রাজস্ব আদায় এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্য পূরণে কতটা কার্যকর হয়, তা সময়ই বলে দেবে।