রাশিয়া যেতে কত টাকা লাগে ২০২৪

রাশিয়া, আয়তনে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের বিশাল ভাণ্ডার। এই দেশটি অনেকের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য, বিশেষত যারা পড়াশোনা, চাকরি কিংবা ভ্রমণের জন্য বিদেশ যেতে চান। তবে রাশিয়া যাওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই এর ভিসা প্রসেসিং, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে। এই নিবন্ধে আমরা রাশিয়া ভ্রমণ বা স্থায়ী উদ্দেশ্যে যাওয়ার বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করব, যা আপনাকে পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝতে সাহায্য করবে।

রাশিয়া ভিসার প্রসেসিং প্রক্রিয়া

রাশিয়া ভিসা প্রধানত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত, যেমন স্টুডেন্ট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা এবং ওয়ার্ক ভিসা। প্রতিটি ক্যাটাগরির ভিসার জন্য আলাদা প্রসেসিং এবং খরচ প্রযোজ্য। বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে এবং বেসরকারিভাবে রাশিয়া যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই প্রসেসিং পদ্ধতিগুলো।

সরকারিভাবে রাশিয়া যাওয়া

সরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় যেতে হলে আপনাকে বোয়েসেল (BOESL) এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এটি একটি সরকারি সংস্থা যা বাংলাদেশি কর্মীদের বিদেশে চাকরির সুযোগ করে দেয়। বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে নিয়মিতভাবে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এখান থেকে কাজের ভিসা নিয়ে রাশিয়া যাওয়ার খরচ তুলনামূলক কম।

সরকারিভাবে যাওয়ার প্রক্রিয়া:

  1. বোয়েসেলের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করে আবেদন করুন।
  2. আবেদন ফরম পূরণ করার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন।
  3. সঠিকভাবে আবেদন করার পরে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিন।
  4. নির্বাচিত হলে ভিসা প্রসেসিং এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করুন।

বেসরকারিভাবে রাশিয়া যাওয়া

বেসরকারি এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে রাশিয়া যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হলেও এটি তুলনামূলক ব্যয়বহুল। অনেক এজেন্সি ভিসা প্রসেসিং, ফ্লাইট টিকিট এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজগুলো সম্পন্ন করে দেয়। তবে এজেন্সি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি, কারণ প্রতারণার ঝুঁকি রয়েছে।

বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়ার ধাপ:

  1. বিশ্বস্ত এজেন্সি নির্বাচন করুন।
  2. এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি করার আগে সমস্ত খরচ এবং শর্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
  3. এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা, বিমানের টিকিট এবং ওয়ার্ক পারমিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।

রাশিয়া ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভিসা আবেদন করতে হলে সঠিক কাগজপত্র এবং ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হলো:

  1. পাসপোর্ট: বৈধ মেয়াদসহ আপনার পাসপোর্ট থাকতে হবে।
  2. পাসপোর্ট সাইজের ছবি: নির্ধারিত আকার এবং মানদণ্ড অনুযায়ী ছবি।
  3. ভোটার আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি কপি।
  4. স্কিল সার্টিফিকেট: কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতার প্রমাণ।
  5. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট: আপনার অপরাধমুক্ত থাকার প্রমাণ।
  6. মেডিকেল সার্টিফিকেট: স্বাস্থ্য সনদ যা আপনার শারীরিক সুস্থতার প্রমাণ দেয়।
  7. ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট: পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ।
  8. ওয়ার্ক পারমিট: রাশিয়ায় কাজ করার অনুমোদন।
  9. শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট: আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ।
  10. জব অফার লেটার: রাশিয়ান কোম্পানির কাছ থেকে কাজের আমন্ত্রণপত্র।
  11. ভিসা আবেদন ফর্ম: সঠিকভাবে পূরণকৃত আবেদন ফর্ম।

সঠিক এবং নির্ভুল ডকুমেন্ট জমা দিলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

রাশিয়া যেতে কত টাকা লাগে

রাশিয়া যাওয়ার খরচ প্রধানত ভিসার ক্যাটাগরি এবং প্রসেসিং পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। আসুন বিভিন্ন ক্যাটাগরির জন্য সম্ভাব্য খরচের ধারণা নেওয়া যাক:

১. কাজের ভিসা (Work Visa)

কাজের ভিসা নিয়ে সরকারিভাবে রাশিয়া গেলে খরচ তুলনামূলক কম হয়।

  • সরকারিভাবে: প্রায় ৫ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ টাকা।
  • বেসরকারিভাবে: প্রায় ৮ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা।

২. স্টুডেন্ট ভিসা (Student Visa)

স্টুডেন্ট ভিসার খরচ তুলনামূলক কম। রাশিয়ার শিক্ষা ব্যয় অন্যান্য পশ্চিমা দেশের তুলনায় সাশ্রয়ী।

  • খরচ: ২ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকার মধ্যে (বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি ব্যতীত)।

৩. টুরিস্ট ভিসা (Tourist Visa)

টুরিস্ট ভিসার জন্য খরচ কম এবং এটি স্বল্প মেয়াদী ভ্রমণের জন্য প্রযোজ্য।

  • খরচ: প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা।

৪. বেসরকারি এজেন্সির ফি

যদি আপনি বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করেন, তবে এজেন্সির সেবার জন্য অতিরিক্ত ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।

রাশিয়া যেতে কত বছর বয়স লাগে

রাশিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভিসার ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়।

কাজের ভিসার জন্য বয়সসীমা

  • সর্বনিম্ন বয়স: ১৯ বছর।
  • সর্বোচ্চ বয়স: ৩৫ বছর।
    যদিও বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য বয়সসীমা

  • সর্বনিম্ন বয়স: ১৬ বছর।
    স্কুল বা কলেজে পড়াশোনা করতে চাইলে বয়সের সীমা আরও কম হতে পারে।

টুরিস্ট ভিসার জন্য

  • কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। তবে প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছর বা তার বেশি) হলে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হয়।

রাশিয়া যেতে কতদিন সময় লাগে

রাশিয়া যাওয়ার প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন ধাপে বিভক্ত, যা সম্পন্ন করতে নির্দিষ্ট সময় লাগে।

১. ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রসেসিং

ভিসা আবেদন করার পর সাধারণত ২০ দিন সময় লাগে।

২. ফ্লাইটের সময়

বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া বিমানে যাওয়ার জন্য প্রায় ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে।

৩. সম্পূর্ণ প্রস্তুতি

প্রস্তুতি থেকে রাশিয়া পৌঁছানো পর্যন্ত প্রায় ৩ মাস থেকে ৬ মাস সময় লাগতে পারে।

শেষ কথা

রাশিয়া যাওয়ার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করলে এটি বেশ সহজ এবং ফলপ্রসূ হতে পারে। তবে এর জন্য সঠিক তথ্য, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এবং নির্ভুল কাগজপত্র থাকা জরুরি। সরকারিভাবে যাওয়ার খরচ কম হলেও বেসরকারিভাবে দ্রুত প্রসেসিং করা যায়। যে উদ্দেশ্যে রাশিয়া যেতে চান, সে অনুযায়ী ভিসার ধরন এবং খরচ নির্ধারণ করুন। আশা করি, এই নিবন্ধটি রাশিয়া যাওয়ার ব্যাপারে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।

সফর শুভ হোক!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top