বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার নিয়ম ২০২৫

পর্তুগালে যাওয়ার স্বপ্ন অনেক বাংলাদেশির মনে রয়েছে। ইউরোপের এই উন্নত দেশটি শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, বরং শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের জন্যও একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। পর্তুগাল তার ফুটবল কিংবদন্তি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দেশ হিসেবেও বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তাছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় এখানকার জীবনযাত্রার মান এবং চাকরির সুযোগ অন্য অনেক দেশের তুলনায় উন্নত।

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব বাংলাদেশ থেকে পর্তুগালে যাওয়ার সমস্ত নিয়ম, খরচ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যারা স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা অথবা মেডিকেল ভিসা নিয়ে পর্তুগাল যেতে চান তাদের জন্য এই গাইডটি অনেক সহায়ক হবে।

পোস্টের বিষয়বস্তু

  1. বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার নিয়ম ২০২৫
  2. পর্তুগাল যেতে কি কি কাগজপত্র লাগে?
  3. বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যেতে কত টাকা লাগে?
  4. অনলাইনে পর্তুগাল ভিসার জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া
  5. পর্তুগালে বেতনের পরিমাণ
  6. পর্তুগালে কোন কাজের চাহিদা বেশি?
  7. বাংলাদেশে পর্তুগাল এম্বাসি কোথায়?
  8. প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)

বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার নিয়ম ২০২৫

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পর্তুগাল ভিসা পাওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও এটি অসম্ভব নয়। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও পর্যটক পর্তুগাল যাচ্ছেন। তবে অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় পর্তুগাল ভিসা পাওয়া তুলনামূলক কঠিন, বিশেষ করে কাজের ও স্টুডেন্ট ভিসার জন্য। বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য প্রধানত চার ধরনের পর্তুগাল ভিসা চালু রয়েছে:

  1. স্টুডেন্ট ভিসা: যারা পর্তুগালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে চান তাদের জন্য।
  2. ওয়ার্ক পারমিট ভিসা: যারা পর্তুগালে কাজ করতে চান তাদের জন্য।
  3. টুরিস্ট ভিসা: যারা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে পর্তুগাল যেতে চান।
  4. মেডিকেল ভিসা: যারা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে পর্তুগালে যেতে চান।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যেতে হলে আপনাকে ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত পর্তুগাল দূতাবাসে ভিসার আবেদন জমা দিতে হবে। আমাদের দেশে পর্তুগালের কোনো সরাসরি দূতাবাস না থাকায় ভারতীয় দূতাবাসে এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হয়।

ভিসার ধরণ অনুযায়ী প্রক্রিয়া

  • স্টুডেন্ট ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া কিছুটা কঠিন, কারণ এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়।
  • টুরিস্ট ভিসা ও মেডিকেল ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ, তবে এগুলো বেশ ব্যয়বহুল।

এছাড়া, পর্তুগাল ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বিকল্প পদ্ধতি হল, যদি আপনার কোনো আত্মীয় পর্তুগালে বসবাস করেন বা নাগরিকত্ব থাকে, তাহলে তাদের রেফারেন্সে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

পর্তুগাল যেতে কি কি কাগজপত্র লাগে

পর্তুগাল ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। নীচে পর্তুগাল ভিসার জন্য সাধারণত যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হয় তা দেওয়া হলো:

  1. পাসপোর্ট: ২ বছর মেয়াদী বৈধ পাসপোর্ট।
  2. ছবি: সদ্য তোলা সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  3. করোনা ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট: বর্তমান পরিস্থিতিতে কোভিড ভ্যাকসিনের প্রমাণ দেখানো আবশ্যক।
  4. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স: আবেদনকারীর অপরাধমূলক কার্যকলাপ না থাকার প্রমাণ হিসেবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
  5. মেডিকেল রিপোর্ট: শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার প্রমাণ।
  6. ব্যাংক স্টেটমেন্ট: বিগত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, যা আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রমাণ করে।
  7. IELTS সার্টিফিকেট: ইংরেজি ভাষার দক্ষতার জন্য।
  8. জব অফার লেটার (ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য) এবং অফার লেটার (স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে)।
  9. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র (স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে) এবং কর্মসংস্থানের অভিজ্ঞতার সনদপত্র (ওয়ার্ক পারমিটের ক্ষেত্রে)।

বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যেতে কত টাকা লাগে

পর্তুগাল ভিসা পাওয়ার খরচটি মূলত নির্ভর করে আপনি কোন ভিসার জন্য আবেদন করছেন তার উপর। বিভিন্ন ভিসার খরচ নিম্নরূপ:

  • কাজের ভিসা (ওয়ার্ক পারমিট): পর্তুগালে কাজের ভিসা নিয়ে যেতে সাধারণত ৮-১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। তবে নির্ভরশীলতা অনুযায়ী এ খরচ ১২-১৫ লক্ষ টাকাও হতে পারে।
  • স্টুডেন্ট ভিসা: স্টুডেন্ট ভিসার জন্য খরচ সাধারণত ৫-৬ লক্ষ টাকা হয়। তবে স্কলারশিপ পেলে খরচ আরও কমে আসতে পারে, প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকার মধ্যে।
  • টুরিস্ট ভিসা: পর্তুগাল ভ্রমণের জন্য টুরিস্ট ভিসার খরচ সাধারণত ৩-৪ লক্ষ টাকা।
  • মেডিকেল ভিসা: চিকিৎসার জন্য পর্তুগাল যেতে খরচও টুরিস্ট ভিসার মত ৩-৪ লক্ষ টাকা হতে পারে।

এই খরচগুলোর মধ্যে ভিসা ফি, বিমানের টিকিট, আবাসন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ অন্তর্ভুক্ত।

অনলাইনে পর্তুগাল ভিসার জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া

বর্তমানে অনলাইনে ঘরে বসেই পর্তুগাল ভিসার জন্য আবেদন করা সম্ভব। বিশেষ করে যারা কাজের ভিসা বা স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে চান, তারা এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। অনলাইনে আবেদন করার ধাপসমূহ:

  1. কাগজপত্র প্রস্তুত: উপরে উল্লেখিত সকল কাগজপত্র স্ক্যান করে নিন।
  2. ওয়েবসাইটে প্রবেশ: www.pt.indeed.com এই সাইটে প্রবেশ করুন।
  3. জব সিলেক্ট করুন: পর্তুগিজ ভাষা না বুঝলে পেজটি ইংরেজিতে অনুবাদ করুন এবং আবেদন করার জন্য জব সিলেক্ট করুন।
  4. তথ্য জমা দিন: নির্ধারিত ফর্মে সমস্ত তথ্য পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন।
  5. আবেদন জমা: সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর Submit বাটনে ক্লিক করুন।

আবেদন গ্রহণযোগ্য হলে পর্তুগাল এম্বাসি থেকে ইমেইলের মাধ্যমে আপনাকে জানানো হবে এবং তারপর আপনি ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত পর্তুগাল এম্বাসিতে গিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।

পর্তুগালে বেতনের পরিমাণ

ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় পর্তুগালে শ্রমিকদের বেতন কিছুটা কম হলেও বাংলাদেশের তুলনায় এটি বেশ ভালো। নীচে পর্তুগালের বিভিন্ন পেশার সম্ভাব্য বেতনের বিবরণ দেওয়া হলো:

  • মাসিক গড় বেতন: প্রায় ৮০,০০০ – ৯০,০০০ টাকা (বাংলাদেশি টাকায়)।
  • দক্ষ শ্রমিকদের বেতন: যাদের কাজের দক্ষতা বেশি তারা মাসিক ১,০০,০০০ – ১,২০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
  • ইলেকট্রিশিয়ান বা টেকনিক্যাল কাজ: এই ধরনের কাজের জন্য বেতন ন্যূনতম ১ লক্ষ টাকা।
  • ক্লিনার পেশা: ক্লিনারদের বেতন সাধারণত ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়।

পর্তুগালে বেতনের পরিমাণ মূলত কাজের ধরন, শ্রমিকের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার উপর নির্ভর করে।

পর্তুগালে কোন কাজের চাহিদা বেশি

পর্তুগালে বিভিন্ন ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে। তবে কিছু নির্দিষ্ট সেক্টরে কাজের চাহিদা অনেক বেশি এবং অভিজ্ঞ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। সেসব সেক্টরের মধ্যে রয়েছে:

  1. আইটি ডিপার্টমেন্ট: সফটওয়্যার ডেভেলপার, সাপোর্ট স্পেশালিস্ট।
  2. গ্রাফিক্স ডিজাইন: ডিজিটাল মার্কেটিং এবং মিডিয়া।
  3. ইলেকট্রিশিয়ান ও মেকানিক্যাল কাজ
  4. ড্রাইভিং
  5. হোটেল ও রেস্টুরেন্ট জব: ওয়েটার, শেফ, হাউজকিপিং।
  6. বিক্রয় প্রতিনিধি
  7. খাবার ডেলিভারি ম্যান
  8. কৃষিকাজ ও ফ্যাক্টরি কাজ
  9. নির্মাণ শ্রমিক ও শপিং মলের চাকরি

বাংলাদেশে পর্তুগাল এম্বাসি কোথায়

বাংলাদেশে পর্তুগালের সরাসরি কোনো দূতাবাস নেই। তাই বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত পর্তুগাল দূতাবাসে গিয়ে ভিসা আবেদন করতে হয়। পর্তুগাল এম্বাসির মাধ্যমে আবেদন করার জন্য ভারত যাওয়ার পূর্বে ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত করতে হবে।

শেষকথা

পর্তুগাল ভিসা পেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের জন্য এই পোস্টে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। পর্তুগাল ভ্রমণের জন্য স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক পারমিট, টুরিস্ট এবং মেডিকেল ভিসার জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করতে হয় এবং আনুষঙ্গিক খরচের বিবরণও আলোচনা করা হয়েছে। যদি আপনি পর্তুগাল যেতে ইচ্ছুক হন, তাহলে সঠিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নিন এবং অবশ্যই ভিসা আবেদন করার সময় সতর্ক থাকুন।

FAQ

পর্তুগাল ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা?

বর্তমান মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী, ১ পর্তুগিজ ইউরো প্রায় ১২০-১২৫ বাংলাদেশি টাকা।

বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল কত কিলোমিটার?

বাংলাদেশ থেকে পর্তুগালের দূরত্ব প্রায় ৯,০০০ কিলোমিটার।

বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যেতে কত সময় লাগে?

এয়ার ট্রাভেলের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যেতে প্রায় ১৫-১৭ ঘণ্টা সময় লাগে, যা ট্রানজিটের উপর নির্ভর করে।

পর্তুগাল যেতে কত বয়স লাগে?

সাধারণত স্টুডেন্ট ভিসার জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং ওয়ার্ক ভিসার জন্য ২১ বছর হতে হয়।

পর্তুগাল ভিসার দাম কত?

ভিসার ধরন এবং প্রয়োজনীয় ফি অনুযায়ী খরচ পরিবর্তিত হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top