রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক ২০২৪

বাংলাদেশে বৈধভাবে যেকোনো ধরনের যানবাহন চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। এটি একটি আইনি অনুমতি পত্র, যা বাংলাদেশ সরকার প্রদান করে থাকে এবং এই লাইসেন্স একজন চালকের ড্রাইভিং যোগ্যতার প্রমাণ বহন করে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালালে আইন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের শাস্তি এবং জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়। তাই প্রতিদিন অসংখ্য চালক নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করছেন এবং লাইসেন্স প্রাপ্তির পর তার বৈধতা যাচাই করার জন্যও বিভিন্ন পদ্ধতিতে তা পরীক্ষা করছেন।

এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো কীভাবে সহজে এবং দ্রুত ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে হয়। আপনার মোবাইল বা রেফারেন্স নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনে বা মেসেজের মাধ্যমে লাইসেন্স চেক করার পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানুন। এছাড়া, ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে গেলে করণীয় নিয়েও আলোচনা করবো।

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার সুবিধাসমূহ

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন:

  1. চালকের পরিচয় নিশ্চিতকরণ: কোনো ব্যক্তিকে গাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় বা তার ড্রাইভিং যোগ্যতা যাচাই করার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা প্রয়োজন।
  2. লাইসেন্সের মেয়াদ যাচাই: ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে কিনা তা জানার জন্য লাইসেন্স চেক করতে পারেন।
  3. লাইসেন্সের অবস্থা নির্ণয়: লাইসেন্স অনুমোদিত হয়েছে কিনা বা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে কিনা তাও জানা যায়।

এখন আমরা ধাপে ধাপে দেখবো কীভাবে সহজ পদ্ধতিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা যায়।

রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার পদ্ধতি

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য আপনার কাছে যদি রেফারেন্স নাম্বার থাকে, তাহলে এই পদ্ধতিটি সহজ ও কার্যকরী। এই প্রক্রিয়ায়, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (BRTA) এর নির্দিষ্ট সফটওয়্যার BRTA DL Checker ব্যবহার করতে হবে।

প্রথম ধাপ:

  • BRTA DL Checker সফটওয়্যার ডাউনলোড: প্রথমে BRTA DL Checker সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করুন।
  • সফটওয়্যারে তথ্য প্রদান: সফটওয়্যারটি চালু করে BRTA Reference No. এবং জন্মতারিখ (Date of Birth) সঠিকভাবে প্রদান করুন। এরপর “চেক” অপশনে ক্লিক করুন।

দ্বিতীয় ধাপ:

  • মেসেজ অপশনের মাধ্যমে চেক: আপনি আপনার মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে সহজেই লাইসেন্স চেক করতে পারেন।
  • মেসেজ পাঠানোর নিয়ম: মেসেজ অপশনে গিয়ে বড় হাতের অক্ষরে DL লিখুন, এরপর একটি স্পেস দিয়ে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর টাইপ করুন এবং ২৬৯৬৯ নম্বরে মেসেজটি পাঠান।

উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি খুব সহজেই আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের বৈধতা যাচাই করতে পারবেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের প্রয়োজন হয়, যা সঠিকভাবে প্রদান করলে লাইসেন্সের অবস্থা দ্রুত জানতে পারবেন। এই তথ্যগুলো হলো:

  1. লাইসেন্স নম্বর: আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিশেষ নম্বর।
  2. ড্রাইভারের নাম: লাইসেন্সধারী ব্যক্তির নাম।
  3. জন্ম তারিখ: সঠিক জন্ম তারিখ প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  4. লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ: মেয়াদ যাচাই করার জন্য এই তারিখটি দরকার হয়।
  5. লাইসেন্স জারিকারীর নাম: কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রদত্ত লাইসেন্সের প্রদানকারী সংস্থা বা কর্মকর্তার নাম।

মোবাইল নাম্বার দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার পদ্ধতি

সবচেয়ে সহজ ও দ্রুত পদ্ধতি হলো মোবাইল নাম্বার দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা। এই পদ্ধতিতে সহজেই ঘরে বসে মেসেজের মাধ্যমে আপনার লাইসেন্স স্ট্যাটাস জানা সম্ভব।

মোবাইলের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার ধাপগুলো

  1. মোবাইলের মেসেজ অপশনে যান: আপনার মোবাইলের মেসেজ অপশন খুলুন।
  2. মেসেজ টাইপ করুন: DL লিখে একটি স্পেস দিন, এরপর আপনার রেফারেন্স নাম্বার টাইপ করুন।
  3. মেসেজ পাঠান: মেসেজটি ২৬৯৬৯ নম্বরে পাঠিয়ে দিন।
  4. ফলাফল প্রাপ্তি: মেসেজ পাঠানোর ৩ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে বিআরটি অফিস থেকে একটি এসএমএস পাবেন, যেখানে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের বর্তমান অবস্থা উল্লেখ থাকবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে গেলে করণীয়

ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। আইন অনুযায়ী, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ এবং এই অবস্থায় ধরা পড়লে জরিমানা এবং শাস্তির সম্মুখীন হতে পারেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে গেলে করণীয়

  1. থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন: নিকটস্থ থানায় গিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে যাওয়ার একটি জিডি করুন।
  2. আবেদন করুন: জিডির কপি, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, হারানো লাইসেন্সের নম্বর, এবং নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে বিআরটি অফিসে পুনরায় লাইসেন্সের জন্য আবেদন করুন।
  3. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুন: আবেদন করার সময় জিডি কপি, ছবি, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পুনরুদ্ধার করার জন্য উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করুন এবং যথাসময়ে নতুন লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।

শেষ কথা

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা অত্যন্ত সহজ একটি প্রক্রিয়া, যা ঘরে বসে মোবাইল বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ যাচাই, বৈধতা নিশ্চিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে সংগ্রহ করার মাধ্যমে একজন সচেতন চালক হিসেবে আপনিও সড়কে নিরাপদে চলাচল করতে পারবেন। আশা করি, এই নির্দেশিকা আপনার লাইসেন্স চেকের প্রক্রিয়াটি আরও সহজ এবং স্বচ্ছ করবে।

ধন্যবাদ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top