পর্তুগাল ভিসার দাম কত ২০২৪

পর্তুগাল, পশ্চিম ইউরোপের একটি আকর্ষণীয় এবং উন্নত দেশ, যেখানে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক, শিক্ষার্থী এবং পরিবারের সদস্যরা যেতে আগ্রহী। উন্নত জীবনযাত্রা, উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ এবং কর্মসংস্থানের জন্য এখানে অনেকেই অভিবাসন করতে চান। তবে পর্তুগালে যাওয়ার জন্য ভিসা প্রয়োজন, যা প্রক্রিয়া এবং খরচের ভিত্তিতে বিভিন্ন রকম হতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা পর্তুগাল ভিসার বিভিন্ন প্রকার, খরচ, প্রক্রিয়া এবং পর্তুগাল যাওয়ার অন্যান্য উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পর্তুগাল ভিসার ধরন এবং এর খরচ

পর্তুগাল ভিসার খরচ সাধারণত নির্ভর করে ভিসার ধরণ এবং ভিসা প্রসেসিং প্রক্রিয়ার ওপর। সরকারি এবং বেসরকারি উভয় উপায়েই ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করা যায়, এবং খরচের ব্যবধানও বিভিন্ন হতে পারে। নিচে ভিসার বিভিন্ন প্রকার এবং তাদের খরচ সম্পর্কে বিশদ তথ্য দেওয়া হলো।

১. পর্তুগাল কোম্পানি ভিসার দাম

পর্তুগালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে সেখানে বিভিন্ন কোম্পানি দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকদের নিয়োগ করে থাকে। এই ভিসার মাধ্যমে পর্তুগালে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া যায় এবং এটি ওয়ার্ক পারমিটের আওতায় পড়ে। সাধারণত, পর্তুগাল কোম্পানি ভিসা প্রসেসিং করতে খরচ হয়:

  • সর্বনিম্ন খরচ: ৪ লাখ টাকা
  • সর্বোচ্চ খরচ: ৫ লাখ টাকা

কোম্পানি ভিসা বা কাজের ভিসা তৈরি করতে সরকারি প্রক্রিয়ায় খরচ তুলনামূলক কম হলেও, এটি পেতে অপেক্ষার সময় বেশি লাগতে পারে।

২. পর্তুগাল স্টুডেন্ট ভিসার দাম

পর্তুগালে উচ্চশিক্ষার জন্য অনেকেই আগ্রহী। পর্তুগালের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নতমানের শিক্ষা প্রদান করে থাকে, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রক্রিয়াকরণের খরচ তুলনামূলকভাবে কম।

  • সর্বনিম্ন খরচ: ২ লাখ টাকা
  • সর্বোচ্চ খরচ: ৩ লাখ টাকা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে সহজেই এই ভিসা পাওয়া যেতে পারে।

৩. পর্তুগাল ফ্যামিলি ভিসার দাম

যারা পর্তুগালে বাস করেন, তারা চাইলেই তাদের পরিবারের সদস্যদের পর্তুগালে নিয়ে যেতে পারেন। ফ্যামিলি ভিসার খরচ মূলত নির্ভর করে কতজন সদস্যকে নিয়ে যেতে চান তার ওপর।

  • সর্বনিম্ন খরচ: ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা
  • সর্বোচ্চ খরচ: ৫ লাখ টাকা

পরিবারের সদস্যদের জন্য ভিসা পেতে অনেক সময় কিছু বাড়তি ডকুমেন্ট জমা দিতে হতে পারে। পরিবারের সদস্যদের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা পূরণের বিষয়টি দেখাতে হয়।

৪. পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসার দাম

পর্তুগালে কাজের জন্য সরাসরি ভিসা পেতে হলে ওয়ার্ক পারমিট প্রয়োজন। এই ধরনের ভিসার মাধ্যমে কাজের জন্য বৈধভাবে সেখানে থাকা যায়। সরকারি এবং বেসরকারি দুইভাবেই এই ভিসা তৈরি করা যায়।

  • সরকারি প্রক্রিয়ায় খরচ: ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা
  • বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে খরচ: ৫ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট কোম্পানির থেকে চাকরির অফার লেটার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়।

পর্তুগাল যাওয়ার উপায়

পর্তুগালে যেতে হলে বৈধ ভিসা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। যেহেতু পর্তুগাল ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ, তাই সেখানে প্রবেশের জন্য উপযুক্ত ডকুমেন্ট এবং অনুমোদন প্রয়োজন। বর্তমানে অনলাইন এবং অফলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। অনলাইনে আবেদন করতে হলে পর্তুগাল ভিসা অফিসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম পূরণ করে এবং আবেদন ফি পরিশোধ করতে হয়।

অনলাইনে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া

অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়:

  1. ওয়েবসাইটে প্রবেশ: পর্তুগাল দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান।
  2. ফরম পূরণ: ভিসা আবেদন ফরম পূরণ করুন।
  3. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযোজন: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন পাসপোর্ট, ফটোগ্রাফ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি স্ক্যান করে জমা দিতে হবে।
  4. আবেদন ফি পরিশোধ: অনলাইনে অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে।
  5. নির্ধারিত সাক্ষাৎকারের তারিখে উপস্থিত থাকা: দূতাবাস কর্তৃক নির্ধারিত সাক্ষাৎকারে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকতে হবে।

অফলাইনে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া

যারা অনলাইনে আবেদন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না, তারা সরাসরি দূতাবাসে গিয়ে অফলাইনে আবেদন করতে পারেন। এজন্য নিকটস্থ পর্তুগাল দূতাবাসে যোগাযোগ করে সরাসরি কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন।

পর্তুগাল যাওয়ার খরচ

পর্তুগাল যাওয়ার জন্য ভিসা, বিমানের টিকেট এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হতে পারে। সামগ্রিক খরচ নির্ভর করে কোন ধরণের ভিসা এবং বিমানের শ্রেণী নির্বাচন করা হয়েছে তার ওপর। বর্তমানে পর্তুগাল যেতে মোট খরচ পড়তে পারে:

  • সর্বনিম্ন খরচ: ৯ লাখ টাকা
  • সর্বোচ্চ খরচ: ১২ লাখ টাকা

সরকারি প্রক্রিয়ায় পর্তুগাল যেতে চাইলে তুলনামূলক কম খরচে যাওয়া সম্ভব। সরকারি প্রক্রিয়ায় মোট খরচ পড়তে পারে ৭ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত।

পর্তুগালে বেতন কাঠামো

পর্তুগালে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বেতন নির্ধারণ করা হয় কাজের ধরন এবং দক্ষতার ভিত্তিতে। বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য বেতনও বিভিন্ন হয়।

  • সাধারণ শ্রমিকের বেতন: ৪০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা
  • দক্ষ শ্রমিকের বেতন: ৫০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা

দক্ষ শ্রমিকদের বেতন সাধারণত বেশি হয়ে থাকে, এবং বিভিন্ন প্রফেশনাল কাজের জন্য বেতন আরও বেশি হতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

পর্তুগালে ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া এবং খরচ সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে দেওয়া হলো:

  1. বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা উপলব্ধ: পর্তুগালে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে স্টুডেন্ট, কোম্পানি, ফ্যামিলি, এবং ওয়ার্ক পারমিট।
  2. এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ: বেসরকারি এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে ভিসা প্রসেস করতে গেলে খরচ তুলনামূলক বেশি হতে পারে। তবে সরকারি প্রক্রিয়ায় খরচ কম হয়।
  3. কাগজপত্রের যথাযথ প্রস্তুতি: ভিসার আবেদন করার সময় পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষা সনদ, চাকরির অফার লেটার (যদি থাকে), এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা জরুরি।

শেষ কথা

পর্তুগালে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হলেও এর খরচ এবং আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো আগে থেকেই জানা থাকলে প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হয়ে যায়। সরকারি বা বেসরকারি যে কোনো মাধ্যমেই আবেদন করা হোক না কেন, সঠিক তথ্য এবং প্রস্তুতির মাধ্যমে পর্তুগালে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top