পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে ২০২৪

বাংলাদেশে পাসপোর্ট প্রস্তুত প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ এবং সুনির্দিষ্ট। বর্তমানে, ৫ বছর এবং ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট তৈরি করা সম্ভব যা দুইটি ভিন্ন পৃষ্ঠার সংখ্যায় পাওয়া যায়: ৪৮ পৃষ্ঠা এবং ৬৪ পৃষ্ঠা। পাসপোর্ট তৈরির জন্য অনলাইন আবেদন পদ্ধতি সহজ করে দেওয়া হয়েছে, যা আপনি নিজেই সম্পন্ন করতে পারেন। তবে, বিভিন্ন ক্যাটাগরির পাসপোর্ট তৈরিতে কত ফি প্রদান করতে হবে তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নিবন্ধে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো কীভাবে অনলাইনে পাসপোর্ট তৈরি করা যায়, পাসপোর্ট ফি সম্পর্কে তথ্য, এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন যা আবেদন প্রক্রিয়ার সময় জমা দিতে হবে।

পাসপোর্ট তৈরিতে ফি সংক্রান্ত তথ্য

বাংলাদেশে পাসপোর্ট তৈরিতে ফি নির্ভর করে পাসপোর্টের মেয়াদ, পৃষ্ঠার সংখ্যা, এবং আবেদনকৃত ক্যাটাগরির উপর। সাধারণ, এক্সপ্রেস এবং সুপার এক্সপ্রেস এই তিনটি ক্যাটাগরিতে পাসপোর্ট প্রস্তুত করা সম্ভব। এই তিনটি ক্যাটাগরি অনুযায়ী সময় এবং খরচে পার্থক্য রয়েছে। নিচে বিভিন্ন ধরনের পাসপোর্টের ফি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ই-পাসপোর্ট ফি (৫ বছর এবং ১০ বছরের জন্য)

ই-পাসপোর্টের জন্য বিভিন্ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পাসপোর্টের মেয়াদ এবং পৃষ্ঠার সংখ্যা অনুযায়ী ভিন্ন হয়।

৫ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট (৪৮ পৃষ্ঠা)

  • রেগুলার ফি: ৪০২৫ টাকা
  • এক্সপ্রেস ফি: ৬৩২৫ টাকা
  • সুপার এক্সপ্রেস ফি: ৮৬২৫ টাকা

৫ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট (৬৪ পৃষ্ঠা)

  • রেগুলার ফি: ৬৩২৫ টাকা
  • এক্সপ্রেস ফি: ৮৬২৫ টাকা
  • সুপার এক্সপ্রেস ফি: ১২০৭৫ টাকা

১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট (৪৮ পৃষ্ঠা)

  • রেগুলার ফি: ৫৭৫০ টাকা
  • এক্সপ্রেস ফি: ৮০৫০ টাকা
  • সুপার এক্সপ্রেস ফি: ১০৩৫০ টাকা

১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট (৬৪ পৃষ্ঠা)

  • রেগুলার ফি: ৮০৫০ টাকা
  • এক্সপ্রেস ফি: ১০৩৫০ টাকা
  • সুপার এক্সপ্রেস ফি: ১৩৮০০ টাকা

উপরোক্ত ফি-এর মাধ্যমে আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন কোন ধরনের পাসপোর্ট আপনার জন্য প্রয়োজন এবং আপনার কত টাকা খরচ হবে।

পাসপোর্ট তৈরিতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন

একটি পাসপোর্ট তৈরির জন্য আবেদন করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যক্তিগত ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। এ ডকুমেন্টগুলো আবেদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে জমা দিতে হবে। নিম্নে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের তালিকা দেওয়া হলো, যা আপনাকে পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে:

  1. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ: এটি আপনার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য।
  2. অনলাইন পাসপোর্ট আবেদন ফর্মের প্রিন্ট কপি: আবেদন সাবমিট করার পর একটি কপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে।
  3. ফি পরিশোধের রশিদ: পাসপোর্টের জন্য প্রদানকৃত ফি-এর রশিদ প্রদান করতে হবে।
  4. নাগরিক সনদপত্র অথবা চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট: আপনার বর্তমান ঠিকানা নিশ্চিত করতে।
  5. পেশার প্রমাণপত্র: যদি আপনি কোনো পেশায় নিয়োজিত থাকেন, তাহলে তার প্রমাণপত্র লাগবে।
  6. পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি (১৮ বছরের নিচে হলে): অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তাদের পিতা-মাতার পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে।

৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ফি-বিন্যাস

৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট তৈরি করতে হলে তিনটি আলাদা ক্যাটাগরিতে ফি প্রদান করা সম্ভব: রেগুলার, এক্সপ্রেস এবং সুপার এক্সপ্রেস। নিচে এই তিনটি ক্যাটাগরির জন্য ফি-এর বিবরণ দেওয়া হলো।

৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য

  • রেগুলার: ৪০২৫ টাকা
  • এক্সপ্রেস: ৬৩২৫ টাকা
  • সুপার এক্সপ্রেস: ৮৬২৫ টাকা

৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য

  • রেগুলার: ৬৩২৫ টাকা
  • এক্সপ্রেস: ৮৬২৫ টাকা
  • সুপার এক্সপ্রেস: ১২০৭৫ টাকা

১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ফি-বিন্যাস

১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট তৈরির জন্য আপনি ৪৮ এবং ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট নির্বাচন করতে পারেন। নিচে এই মেয়াদী পাসপোর্টের ফি-এর বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো।

৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য

  • রেগুলার: ৫৭৫০ টাকা
  • এক্সপ্রেস: ৮০৫০ টাকা
  • সুপার এক্সপ্রেস: ১০৩৫০ টাকা

৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য

  • রেগুলার: ৮০৫০ টাকা
  • এক্সপ্রেস: ১০৩৫০ টাকা
  • সুপার এক্সপ্রেস: ১৩৮০০ টাকা

পাসপোর্টের মেয়াদ এবং পৃষ্ঠার সংখ্যা অনুযায়ী এই ফি-গুলো নির্ধারিত হয়েছে। তবে এই ফি প্রদানের মাধ্যমে আপনি দ্রুততার ভিত্তিতে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।

পাসপোর্ট তৈরির সময়সীমা

বাংলাদেশে পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে আবেদনকৃত ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে প্রসেসিং টাইম ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত তিনটি সময়সীমা অনুযায়ী পাসপোর্ট প্রস্তুত করা হয়:

  1. রেগুলার সেবা: ১৫-২১ কর্মদিবস
  2. এক্সপ্রেস সেবা: ৭-১০ কর্মদিবস
  3. সুপার এক্সপ্রেস সেবা: ২-৩ কর্মদিবস

এই সময়সীমা নির্ধারিত হলেও স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসের উপর ভিত্তি করে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। তাই জরুরি প্রয়োজনে সুপার এক্সপ্রেস সেবা ব্যবহার করা সর্বোত্তম।

অনলাইন পাসপোর্ট আবেদনের ধাপসমূহ

বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট তৈরির জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইন মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়। নিচে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ার ধাপগুলো আলোচনা করা হলো:

  1. অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন: প্রথমে ই-পাসপোর্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (www.epassport.gov.bd) এ প্রবেশ করুন।
  2. নতুন আবেদন ফর্ম পূরণ করুন: সাইটে গিয়ে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
  3. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, যেমন NID, জন্ম সনদ, নাগরিক সনদ, এবং পেশার প্রমাণপত্র আপলোড করতে হবে।
  4. ফি পরিশোধ করুন: আবেদন ফর্ম পূরণের পর নির্ধারিত ফি অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে।
  5. বায়োমেট্রিক এবং ছবি তোলার তারিখ নির্ধারণ: ফি পরিশোধের পর নির্ধারিত তারিখে বায়োমেট্রিক এবং ছবি তোলার জন্য পাসপোর্ট অফিসে হাজির হতে হবে।
  6. পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন: প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।

শেষ কথা

বাংলাদেশে পাসপোর্ট তৈরি একটি সুনির্দিষ্ট এবং সহজ প্রক্রিয়া। যারা পাসপোর্ট তৈরিতে আগ্রহী, তারা নিজে নিজেই অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করতে পারেন। পাসপোর্ট তৈরির সময়সীমা এবং খরচের বিবরণ জানতে এ নিবন্ধ আপনাকে সহায়তা করবে। যেহেতু পাসপোর্ট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, তাই এর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী উপযুক্ত ক্যাটাগরি বেছে নিন এবং যথাসময়ে আবেদন সম্পন্ন করুন। এই পোস্ট থেকে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে উপকৃত হলে, আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

ধন্যবাদ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top