সরকারি ছুটির তালিকা ২০২৬

বাংলাদেশের সরকারি ছুটি কেবলমাত্র বিশ্রাম ও বিনোদনের দিন নয়, বরং তা জাতীয় ইতিহাস, ধর্মীয় আবেগ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। প্রতি বছরই এই ছুটির ক্যালেন্ডার সামান্য পরিবর্তিত হয়, তবে ২০২৬ সালও এর ব্যতিক্রম নয়। এই প্রবন্ধে আমরা ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব এবং প্রতিটি ছুটির পেছনের তাৎপর্য, সামাজিক প্রভাব ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা করব।

পোষ্টের বিষয়বস্তু

২০২৬ সালের সরকারি ছুটির ক্যালেন্ডার এক নজরে

তারিখদিনছুটির নাম
২৪ জানুয়ারিরবিবারশব-ই-বরাত
২১ ফেব্রুয়ারিরবিবারশহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
০৫ মার্চশুক্রবারজুমাতুল বিদা
০৯ মার্চমঙ্গলবারঈদুল ফিতর
১০ মার্চবুধবারঈদুল ফিতর
১১ মার্চবৃহস্পতিবারঈদুল ফিতর
১৭ মার্চবুধবারজাতির পিতার জন্মবার্ষিকী
২৬ মার্চশুক্রবারস্বাধীনতা দিবস
১৪ এপ্রিলবুধবারপহেলা বৈশাখ
০১ মেশনিবারমে দিবস
১৬ মেরবিবারঈদুল আযহা
১৭ মেসোমবারঈদুল আযহা
১৮ মেমঙ্গলবারঈদুল আযহা
২০ মেবৃহস্পতিবারবুদ্ধ পূর্ণিমা
১৫ জুনমঙ্গলবারআশুরা
১৫ আগস্টরবিবারঈদে মিলাদুন্নবী
১৫ আগস্টরবিবারজাতীয় শোক দিবস
২৪ আগস্টমঙ্গলবারশুভ জন্মাষ্টমী
১০ অক্টোবররবিবারবিজয়া দশমী
১৬ ডিসেম্বরবৃহস্পতিবারবিজয় দিবস
২৫ ডিসেম্বরশনিবারবড়দিন

জানুয়ারি ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতার সূচনা

শব-ই-বরাত (২৪ জানুয়ারি, রবিবার)

শব-ই-বরাত ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এক বিশেষ রাত, যাকে “লাইলাতুল বরাত” বলা হয়। মুসলমানরা এই রাতে ইবাদত-বন্দেগি, কোরআন তিলাওয়াত ও নফল নামাজ আদায় করে থাকেন। গ্রামীণ জনপদে মসজিদ-মাদরাসায় বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন হয়, শহরে মিষ্টান্ন বিতরণ ও সামাজিক মিলনমেলা দেখা যায়।

ফেব্রুয়ারি ভাষা ও আত্মত্যাগের মাস

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (২১ ফেব্রুয়ারি, রবিবার)

বাংলাদেশের জন্য ফেব্রুয়ারি মানেই এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন শহীদরা। তাই ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু শহীদ দিবস নয়, বরং বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও পালিত হয়। এদিন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়, বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন হয়।

মার্চ ইসলামি উৎসব ও জাতীয় গৌরব

জুমাতুল বিদা (০৫ মার্চ, শুক্রবার)

রমজান মাসের শেষ জুমা বা জুমাতুল বিদা মুসলিম সমাজের কাছে এক পবিত্র দিন। বিশেষ খুতবা, নামাজ ও দোয়ার মধ্য দিয়ে এই দিন পালন করা হয়।

ঈদুল ফিতর (০৯-১১ মার্চ, মঙ্গলবার-বৃহস্পতিবার)

ঈদুল ফিতর ইসলাম ধর্মের অন্যতম প্রধান উৎসব। রমজান শেষে মুসলমানরা আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করেন। ঈদের জামাত, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, নতুন পোশাক ও খাবারের আয়োজন এ উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলে। তিন দিনের সরকারি ছুটি মানুষকে পরিবার ও প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ করে দেয়।

জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী (১৭ মার্চ, বুধবার)

১৯২০ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সারাদেশে শিশু-কিশোরদের জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।

স্বাধীনতা দিবস (২৬ মার্চ, শুক্রবার)

১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়। সারাদেশে প্যারেড, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শহীদদের স্মরণ এবং পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়।

এপ্রিল সংস্কৃতির রঙিন আবাহন

পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল, বুধবার)

বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ কেবল একটি ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের দিন নয়, এটি জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। মঙ্গল শোভাযাত্রা, গ্রামীণ মেলা, হালখাতা ও ভোজনবিলাসে ভরে ওঠে দিনটি।

মে শ্রমিকের অধিকার ও কোরবানি উৎসব

মে দিবস (০১ মে, শনিবার)

বিশ্বব্যাপী শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসকে স্মরণ করে পালিত হয় মে দিবস। বাংলাদেশেও এদিনে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিয়ে আলোচনা, র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

ঈদুল আযহা (১৬-১৮ মে, রবিবার-মঙ্গলবার)

কোরবানি ঈদে মুসলমানরা কোরবানির পশু জবাই করে থাকেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এ উৎসব আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়। তিন দিনের ছুটি মানুষকে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে মাংস ভাগাভাগি করার সুযোগ দেয়।

বুদ্ধ পূর্ণিমা (২০ মে, বৃহস্পতিবার)

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য বুদ্ধ পূর্ণিমা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপরিনির্বাণ—all তিনটি ঘটনাই এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল।

জুন ইসলামি শোক-অনুভূতি

আশুরা (১৫ জুন, মঙ্গলবার)

মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরা মুসলমানদের কাছে শোক ও ভাবগম্ভীরতার দিন। ইমাম হোসেন (রাঃ)-এর শাহাদাতের স্মৃতিকে কেন্দ্র করে এদিন মিছিল, দোয়া ও ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

আগস্ট শোক ও ধর্মীয় শ্রদ্ধা

ঈদে মিলাদুন্নবী (১৫ আগস্ট, রবিবার)

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)-এর জন্ম ও মৃত্যু একই দিনে সংঘটিত হওয়ায় এ দিন মুসলমানদের কাছে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। মসজিদে দোয়া মাহফিল, ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনার মাধ্যমে দিনটি পালিত হয়।

জাতীয় শোক দিবস (১৫ আগস্ট, রবিবার)

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার স্মৃতিতে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়। এদিন কালো ব্যাজ ধারণ, আলোচনা সভা এবং কোরআন খতম অনুষ্ঠিত হয়।

শুভ জন্মাষ্টমী (২৪ আগস্ট, মঙ্গলবার)

হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য জন্মাষ্টমী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন। মন্দিরে পূজা, রথযাত্রা ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিনটি পালিত হয়।

অক্টোবর দুর্গাপূজার মহোৎসব

বিজয়া দশমী (১০ অক্টোবর, রবিবার)

দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটে বিজয়া দশমীতে। হিন্দু সম্প্রদায় মা দুর্গাকে বিদায় জানিয়ে আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে।

🇧🇩 ডিসেম্বর গৌরবের স্মৃতি

বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার)

১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এদিন সারা দেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বিজয় মিছিল এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়।

বড়দিন (২৫ ডিসেম্বর, শনিবার)

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য বড়দিন যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব। গির্জায় প্রার্থনা, কেক কাটা, উপহার বিনিময় ও উৎসবমুখর পরিবেশ এদিনের বৈশিষ্ট্য।

শেষ কথা

বাংলাদেশের ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা শুধু বিশ্রামের দিনগুলিই নয়, বরং তা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের প্রতিফলন। প্রতিটি ছুটি সমাজে ভিন্ন ভিন্ন আবেগ সৃষ্টি করে—কোথাও আনন্দ, কোথাও শোক, কোথাও বা আত্মত্যাগের শিক্ষা। এই ছুটিগুলো একদিকে যেমন জাতীয় চেতনা জাগ্রত করে, অন্যদিকে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে বন্ধন দৃঢ় করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top