বাংলাদেশে গাড়ি চালানোর জন্য বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ছাড়া সাধারণ সড়কে গাড়ি চালাতে পারবেন না। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির নিয়ম, খরচ, কাগজপত্র, এবং নবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
২০২৫ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার খরচ পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। এখানে লার্নার লাইসেন্স, অপেশাদার লাইসেন্স, পেশাদার লাইসেন্স এবং আন্তর্জাতিক লাইসেন্সের ফি, নবায়ন খরচ, এবং স্মার্ট কার্ড প্রাপ্তির বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের ধরন ও ক্যাটাগরি
বাংলাদেশে মূলত তিন ধরনের লাইসেন্স দেওয়া হয়—
- লার্নার লাইসেন্স (Learner’s License)
- অপেশাদার লাইসেন্স (Non-professional License)
- পেশাদার লাইসেন্স (Professional License)
এছাড়া যারা বিদেশে গাড়ি চালাতে চান তাদের জন্য রয়েছে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স।
প্রত্যেক লাইসেন্সের আবার ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরি আছে—
- হালকা মোটরযান (Light Motor Vehicle – LMV)
- মধ্যম মোটরযান (Medium Motor Vehicle – MMV)
- ভারী মোটরযান (Heavy Motor Vehicle – HMV)
লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রথম ধাপ হলো লার্নার লাইসেন্স। এটি ছাড়া অন্য কোনো লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যায় না।
লার্নার লাইসেন্স ফি (২০২৫)
- ক্যাটাগরি-১ (মোটরসাইকেল বা হালকা যান – যেকোনো একটি) : ৩৪৫ টাকা
- ক্যাটাগরি-১ (মোটরসাইকেল ও হালকা যান – উভয়ই) : ৫১৮ টাকা
- ক্যাটাগরি-২ (অন্যান্য যানবাহন) : ৭৪৮ টাকা
আবেদন অনলাইনে করতে হয় এবং ফি পরিশোধের পর আবেদনকারীকে লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয়।
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে
অপেশাদার লাইসেন্স সাধারণত ব্যক্তিগত গাড়ি চালানোর জন্য প্রযোজ্য।
বয়স ও যোগ্যতা
- হালকা মোটরযান: বয়স কমপক্ষে ২০ বছর, গাড়ির ওজন ২৫০০ কেজির নিচে।
- মধ্যম মোটরযান: বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর, গাড়ির ওজন ২৫০০–৬৫০০ কেজি।
- ভারী মোটরযান: বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর, গাড়ির ওজন ৬৫০০ কেজির বেশি।
ফি (২০২৫)
অপেশাদার লাইসেন্স ১০ বছরের জন্য বৈধ হয়।
- আবেদন ফি: ৪৪৯৮ টাকা
- অনলাইন কুরিয়ার ফি: ৬০ টাকা
➡️ মোট খরচ দাঁড়ায় ৪৫৫৮ টাকা।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?
যারা ট্যাক্সি, বাস, ট্রাক বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গাড়ি চালাতে চান তাদের জন্য এই লাইসেন্স আবশ্যক।
বৈধতা ও খরচ
- মেয়াদ: ৫ বছর
- ফি: ২৭৭২ টাকা
আবেদনকারীকে লার্নার কপি নিতে হবে এবং লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?
বিদেশে গাড়ি চালানোর জন্য আন্তর্জাতিক লাইসেন্স করতে হয়।
- ফি (২০২৫): ২৫০০ টাকা
- মেয়াদ: ৩ বছর (কিন্তু দেশভেদে মেয়াদ ভিন্ন হতে পারে)
দ্রষ্টব্য: এটি মূল লাইসেন্সের বিকল্প নয়। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক লাইসেন্সের পাশাপাশি জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্সও থাকতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে কত টাকা লাগে?
লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলে নবায়ন করতে হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগে ও পরে নবায়নের খরচ আলাদা।
অপেশাদার লাইসেন্স নবায়ন ফি (২০২৫)
- মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নবায়ন: ৪২১২ টাকা
- ১৫ দিনের পর নবায়ন: মূল ফি + প্রতি বছর ৫১৮ টাকা জরিমানা
➡️ সাধারণত প্রায় ৪২১৫ টাকা খরচ হয়।
পেশাদার লাইসেন্স নবায়ন ফি (২০২৫)
- মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নবায়ন: ২৪৮৭ টাকা
- ১৫ দিনের পর নবায়ন: মূল ফি + প্রতি বছর ৫১৮ টাকা জরিমানা
➡️ সাধারণত ২৪৮৭ টাকা থেকে শুরু হয়।
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের খরচ
বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স কাগজের পরিবর্তে স্মার্ট কার্ড আকারে দেওয়া হয়।
- লাইসেন্স ফি প্রদানের পর স্মার্ট কার্ড আলাদা করে কোনো খরচ ছাড়াই প্রদান করা হয়।
- তবে আবেদনকারী চাইলে কুরিয়ার চার্জ বাবদ ৬০ টাকা অতিরিক্ত জমা দিতে হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (২০২৫)
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সময় নির্দিষ্ট কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়।
আবশ্যিক কাগজপত্র
- পূর্ণাঙ্গ আবেদন ফরম
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
- সদ্য তোলা রঙিন ছবি (৩০০ × ৩০০ পিক্সেল)
- রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের দেওয়া মেডিকেল সনদ
- ঠিকানা প্রমাণের জন্য বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানি বিলের কপি
অতিরিক্ত কাগজপত্র
- পেশাদার লাইসেন্সের জন্য:
- পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার ধাপসমূহ
১. অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করা
২. নির্ধারিত ফি জমা দেওয়া
৩. প্রাথমিকভাবে লার্নার লাইসেন্স সংগ্রহ করা
৪. লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা দেওয়া
৫. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে স্মার্ট কার্ড ইস্যু
২০২৫ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্সের খরচ সারসংক্ষেপ
লাইসেন্সের ধরন | মেয়াদ | খরচ (টাকা) |
---|---|---|
লার্নার লাইসেন্স (মোটরসাইকেল/হালকা যান) | ৬ মাস | ৩৪৫ – ৭৪৮ |
অপেশাদার লাইসেন্স | ১০ বছর | ৪৪৯৮ + ৬০ |
পেশাদার লাইসেন্স | ৫ বছর | ২৭৭২ |
আন্তর্জাতিক লাইসেন্স | ৩ বছর | ২৫০০ |
অপেশাদার নবায়ন | ১০ বছর | ৪২১২+ |
পেশাদার নবায়ন | ৫ বছর | ২৪৮৭+ |
শেষ কথা
২০২৫ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে খরচের পরিমাণ নির্ধারিত এবং এটি লাইসেন্সের ধরন ও ক্যাটাগরির ওপর নির্ভর করে। নতুন আবেদন হোক বা নবায়ন—সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিতে হবে। নিয়ম মেনে আবেদন করলে সহজেই লার্নার লাইসেন্স থেকে শুরু করে পেশাদার কিংবা আন্তর্জাতিক লাইসেন্স সংগ্রহ করা সম্ভব।