বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে কক্সবাজার শুধু একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়, বরং এটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক মহামঞ্চ। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত হওয়ায় এর প্রতি আকর্ষণ স্বাভাবিকভাবেই বহুগুণ বেশি। প্রতিদিন হাজারো মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সবাজারে ছুটে আসেন, আর রাজধানী ঢাকা থেকে পর্যটকদের সিংহভাগ যাত্রা শুরু হয়। অতীতে শুধুমাত্র সড়কপথ বা আকাশপথে যাতায়াতের সুযোগ থাকলেও বর্তমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ায় ভ্রমণ আরও সহজ, স্বস্তিদায়ক ও সময় সাশ্রয়ী হয়েছে।
এই নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে—ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেনের ভাড়া, সময়সূচী, টিকেট কাটার নিয়ম, ট্রেনের নাম ও যাত্রাবিরতির তথ্য। ভ্রমণ পরিকল্পনা করার আগে এই পূর্ণাঙ্গ গাইডটি আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
কেন কক্সবাজার ভ্রমণে ট্রেন সেরা বিকল্প?
একসময় ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে হলে পর্যটকদের প্রথমে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে হতো, এরপর বাস কিংবা লোকাল ট্রেনে কক্সবাজারের পথে যাত্রা অব্যাহত রাখতে হতো। এতে শুধু সময়ই বেশি লাগত না, বরং ভ্রমণের ক্লান্তিও বাড়ত। কিন্তু ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে সরাসরি ঢাকা–কক্সবাজার রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালু করেছে।
এই সুবিধার ফলে:
- যাত্রীরা দীর্ঘ সড়কযাত্রার ভোগান্তি এড়াতে পারছেন।
- সাশ্রয়ী মূল্যে আরামদায়ক ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন।
- ট্রেনের নির্দিষ্ট সময়সূচী থাকায় ভ্রমণ পরিকল্পনা সহজ হয়েছে।
- পর্যটন শিল্পে নতুন গতি এসেছে, কারণ এখন পরিবারসহ নিরাপদে ভ্রমণ করা যাচ্ছে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার রেলপথের দূরত্ব ও যাত্রাসময়
ঢাকা টু কক্সবাজার রুটের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫১ কিলোমিটার। আধুনিক ও বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেনে এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে মাত্র ৮ ঘন্টা ৫০ মিনিট। অন্য যেকোনো পরিবহন মাধ্যমের তুলনায় এটি দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দ্যময়।
ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেনের নাম ও পরিচালনার তথ্য
বর্তমানে দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা থেকে কক্সবাজারে সরাসরি চলাচল করছে।
- কক্সবাজার এক্সপ্রেস – প্রথম সরাসরি ট্রেন, ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে।
- পর্যটক এক্সপ্রেস – দ্বিতীয় সরাসরি ট্রেন, ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি চালু হয়।
এই ট্রেনগুলো পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে, এবং প্রতিদিন হাজারো যাত্রী এই সার্ভিস ব্যবহার করছেন।
ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেন ভাড়া ২০২৫
ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনে ভ্রমণের সময় যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন শ্রেণির আসন ব্যবস্থা রয়েছে। ভাড়ার তালিকা নিচে দেওয়া হলো –
ট্রেনের নাম | রুট | শোভন চেয়ার | স্নিগ্ধা | এসি বার্থ | এসি সিট |
---|---|---|---|---|---|
কক্সবাজার এক্সপ্রেস | ঢাকা → কক্সবাজার | ৬৯৫ টাকা | ১,৩২৫ টাকা | ২,৩৮০ টাকা | ১,৫৯০ টাকা |
পর্যটক এক্সপ্রেস | ঢাকা → কক্সবাজার | ৬৯৫ টাকা | ১,৩২৫ টাকা | ২,৩৮০ টাকা | ১,৫৯০ টাকা |
🔹 নোটিশ: অনলাইনে টিকেট কিনলে প্রতি টিকেটে ২০ টাকা সার্ভিস চার্জ যোগ হবে। এছাড়া এসি বার্থ ও এসি সিট টিকেটের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা বেডিং চার্জ প্রযোজ্য।
ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচী ২০২৫
ভ্রমণের সঠিক পরিকল্পনার জন্য সময়সূচী জানা অত্যন্ত জরুরি।
ট্রেনের নাম | প্রারম্ভিক স্টেশন | যাত্রা শুরু | গন্তব্য স্টেশন | যাত্রা শেষ | সাপ্তাহিক ছুটি |
---|---|---|---|---|---|
কক্সবাজার এক্সপ্রেস | ঢাকা কমলাপুর | রাত ১০:৩০ মিনিট | কক্সবাজার | সকাল ৭:২০ মিনিট | সোমবার |
পর্যটক এক্সপ্রেস | ঢাকা কমলাপুর | ভোর ৬:১৫ মিনিট | কক্সবাজার | বিকাল ৩:০০ টা | রবিবার |
কক্সবাজার থেকে ঢাকা ফেরার সময়সূচী
ভ্রমণের পরিকল্পনায় ফেরার সময়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
- কক্সবাজার এক্সপ্রেস কক্সবাজার থেকে দুপুরে ছেড়ে যায় এবং রাতে ঢাকায় পৌঁছে।
- পর্যটক এক্সপ্রেস কক্সবাজার থেকে বিকালে যাত্রা শুরু করে এবং রাতে ঢাকায় পৌঁছে।
(সঠিক সময় জানতে ভ্রমণের আগে রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট চেক করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।)
ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেন টিকেট কাটার নিয়ম
বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট ক্রয় প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ। যাত্রীদের জন্য রয়েছে দুই ধরনের সুবিধা –
১. স্টেশন টিকেট কাউন্টার থেকে
কমলাপুর, বিমানবন্দর বা দেশের যেকোনো বড় রেলস্টেশন থেকে সরাসরি কাউন্টার থেকে টিকেট কেনা যায়।
২. অনলাইন বুকিং (eticket.railway.gov.bd)
- ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
- যাত্রার তারিখ, রুট ও শ্রেণি নির্বাচন করতে হবে।
- মোবাইল ব্যাংকিং/কার্ডের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।
- টিকেট ই-মেইল/এসএমএসে পাওয়া যাবে, যা প্রিন্ট বা মোবাইলে দেখিয়েই ভ্রমণ করা সম্ভব।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভ্রমণকারীদের জন্য বিশেষ টিপস
- ভ্রমণের মৌসুমে (ডিসেম্বর থেকে মার্চ) আগে থেকেই টিকেট বুকিং করে রাখুন।
- সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ট্রেন চলাচল করে না, তাই ভ্রমণের সময়সূচী ঠিক করার সময় এ বিষয়টি মাথায় রাখুন।
- যাত্রার সময় প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র ও প্রিন্টেড টিকেট সাথে রাখুন।
- শিশু ও বয়স্ক যাত্রীদের জন্য স্নিগ্ধা বা এসি আসন বেছে নিলে ভ্রমণ আরও আরামদায়ক হবে।
- যাত্রাপথে পর্যাপ্ত পানি ও হালকা খাবার সাথে রাখুন।
পর্যটন শিল্পে রেলপথের অবদান
ঢাকা–কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন চালু হওয়ায় কক্সবাজার ভ্রমণ আরও সহজলভ্য হয়েছে। ফলে:
- স্থানীয় হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পরিবহন ব্যবসায় নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছে।
- দেশের পর্যটন খাতের জিডিপিতে অবদান বাড়ছে।
- আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্যও ভ্রমণ সুবিধাজনক হয়েছে।
শেষ কথা
ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনে ভ্রমণ বর্তমানে সবচেয়ে আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার যাত্রায় দেশের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ভ্রমণের সময়সূচী, ভাড়া ও টিকেট কাটার নিয়ম সম্পর্কে সচেতন থেকে সহজেই আপনার ভ্রমণকে ঝামেলামুক্ত করা সম্ভব।