বাংলাদেশে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে রান্নার ধরণেও পরিবর্তন এসেছে। একসময় কেরোসিন বা গ্যাস ছাড়া রান্না কল্পনা করা যেত না, কিন্তু এখন বিদ্যুতের চুলা বা ইলেকট্রিক কুকার ঘরে ঘরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গৃহিণী থেকে শুরু করে অবিবাহিত শিক্ষার্থী কিংবা ব্যাচেলরদের জন্যও এটি অত্যন্ত সুবিধাজনক। নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব এবং সহজ ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় মানুষ ধীরে ধীরে গ্যাসের পরিবর্তে কারেন্টের চুলার দিকে ঝুঁকছে।
এই বিস্তৃত নিবন্ধে আমরা দেখবো—বাংলাদেশে ইলেকট্রিক চুলার দাম কত, কোন কোন ব্র্যান্ড জনপ্রিয়, কোন ফিচারগুলো দেখা উচিত, এবং চুলা কেনার আগে কী কী বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
কারেন্টের চুলা কেন জনপ্রিয় হচ্ছে?
- গ্যাস সংকট মোকাবিলা: দেশে গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, আর সেই তুলনায় সরবরাহে চাপ দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের চুলা একটি কার্যকর বিকল্প।
- দ্রুত রান্না: আধুনিক ইলেকট্রিক চুলায় ইনডাকশন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যা অল্প সময়ে খাবার রান্না করতে সক্ষম।
- পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা: খোলা আগুন না থাকার কারণে আগুন লাগার ঝুঁকি কম। একই সঙ্গে রান্নাঘরও থাকে ধোঁয়াহীন ও পরিষ্কার।
- পোর্টেবল ও সহজ ব্যবহারযোগ্য: হোস্টেল, বাসা বদলানো কিংবা ভ্রমণের সময় সহজে বহনযোগ্য।
ইলেকট্রিক চুলার দাম কত?
বাংলাদেশের বাজারে ইলেকট্রিক চুলার দাম প্রায় ১,৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬,০০০ টাকা বা তারও বেশি পর্যন্ত হতে পারে। দাম নির্ভর করে:
- ব্র্যান্ড
- মডেল
- সাইজ (সিঙ্গেল বা ডাবল বার্নার)
- ফিচার (ডিজিটাল কন্ট্রোল, টাচ প্যানেল, পাওয়ার লেভেল, অটো শাটডাউন ইত্যাদি)
জনপ্রিয় ইলেকট্রিক চুলা ও তাদের দাম
1. Osaka Electric Induction Chula (Hot Plate Cooker)
- দাম: ১,৮৯০ টাকা
- স্পেসিফিকেশন:
- সিঙ্গেল বার্নার
- ব্ল্যাক কালার
- ওজন: ৪.৫ lbs
- পাওয়ার: ১১০০w
- কোথায় পাওয়া যায়: দারাজসহ বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস।
2. Walton Induction Cooker সিরিজ
ওয়ালটন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। এর বিভিন্ন মডেলের দাম নিচে দেওয়া হলো—
- WI-F15 (Induction Cooker) → ৪,০৮০ টাকা
- WI-Cook Master → ৩,৬৪০ টাকা
- WI-S40 → ৩,৫১০ টাকা
- WI-Stanley 20 → ৪,৭০০ টাকা
কখনো কখনো ওয়ালটনের অনলাইন শপ বা শোরুম থেকে ১০%–১৫% পর্যন্ত ডিসকাউন্টও পাওয়া যায়।
3. Vision Electric Cooker (RFL Group)
- দাম: প্রায় ২,৫০০ – ৪,৫০০ টাকা
- ফিচারস:
- ডিজিটাল ডিসপ্লে
- একাধিক কুকিং মোড
- টাচ কন্ট্রোল
4. Nova Electric Cooker
- দাম: ২,০০০ – ৩,২০০ টাকা
- কমপ্যাক্ট সাইজ এবং টেকসই গুণমানের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
5. Kiam Electric Cooker
- দাম: ২,২০০ – ৩,৮০০ টাকা
- পরিচিত ব্র্যান্ড, সহজ ব্যবহারযোগ্য, এবং ভালো পাওয়ার এফিশিয়েন্সি।
ইলেকট্রিক চুলা কেনার আগে যেসব বিষয় খেয়াল করবেন
- পাওয়ার ক্যাপাসিটি (Wattage) – বেশি ওয়াট মানে দ্রুত রান্না, তবে বিদ্যুৎ খরচও বাড়তে পারে।
- সিঙ্গেল নাকি ডাবল বার্নার – আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী নির্বাচন করুন।
- অটো শাটডাউন ফিচার – রান্নার নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।
- ডিজিটাল টাচ কন্ট্রোল বনাম ম্যানুয়াল – যারা আধুনিক ফিচার চান তারা টাচ কন্ট্রোল বেছে নিতে পারেন।
- ওয়ারেন্টি ও সার্ভিস সেন্টার – ভালো ব্র্যান্ড সাধারণত ১–২ বছরের ওয়ারেন্টি দেয়।
বিদ্যুৎ খরচ কেমন হয়?
অনেকে ভাবেন ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ বিল আকাশচুম্বী হবে। বাস্তবে এটি নির্ভর করে আপনার ব্যবহার প্যাটার্ন ও চুলার ওয়াটেজ এর উপর।
- সাধারণত ১০০০w–২০০০w এর চুলা ঘণ্টায় প্রায় ১ ইউনিট (কিলোওয়াট আওয়ার) বিদ্যুৎ খরচ করে।
- প্রতিদিন ২ ঘণ্টা ব্যবহার করলে মাসে আনুমানিক ৬০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে।
- বর্তমান বাংলাদেশে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম গড়ে ৮–১০ টাকা ধরা হলে মাসিক খরচ প্রায় ৪৮০–৬০০ টাকা বাড়তে পারে।
পরিবেশবান্ধব দিক
গ্যাসের চুলার তুলনায় ইলেকট্রিক কুকার পরিবেশবান্ধব। এতে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয় না, ধোঁয়া নেই, এমনকি ঘরও গরম হয়ে ওঠে না। ফলে গ্রীষ্মকালেও রান্নাঘরে আরামদায়ক পরিবেশ বজায় থাকে।
কোন চুলার চাহিদা সবচেয়ে বেশি?
বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ওয়ালটন ইন্ডাকশন কুকারের। এর পরেই স্থান পাচ্ছে Osaka এবং Vision ব্র্যান্ডের চুলা।
- Walton → নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড, সহজ সার্ভিসিং।
- Osaka → কম দামে টেকসই পণ্য।
- Vision → আধুনিক ফিচার সমৃদ্ধ।
শেষ কথা
বাংলাদেশের বাজারে ইলেকট্রিক চুলা এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনীয় একটি গৃহস্থালি পণ্য। দাম ১,৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত হলেও সঠিক মডেল বাছাই করলে দীর্ঘদিন নির্ভরযোগ্যভাবে ব্যবহার করা যায়। যারা দ্রুত, নিরাপদ এবং পরিষ্কার রান্না চান, তাদের জন্য ইলেকট্রিক কুকার নিঃসন্দেহে একটি স্মার্ট সমাধান।