এয়ার কুলার এর দাম কত ২০২৫

বাংলাদেশ একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। বছরের বেশিরভাগ সময়েই মানুষকে অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্রতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়। ফ্যান অনেকটা স্বস্তি দিলেও প্রচণ্ড গরমে তা যথেষ্ট নয়। এয়ার কন্ডিশনার অনেকের জন্য কার্যকর সমাধান হলেও উচ্চ মূল্যের কারণে এবং বিদ্যুৎ বিলের চাপের কারণে অনেকেই তা ব্যবহার করতে পারেন না। তাই সাশ্রয়ী এবং কার্যকর সমাধান হিসেবে এয়ার কুলার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

এই দীর্ঘ ও বিশদ নিবন্ধে আমরা জানব—এয়ার কুলারের ধরন, প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য, দাম, সুবিধা-অসুবিধা এবং বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া সেরা এয়ার কুলার মডেলগুলোর বিস্তারিত।

এয়ার কুলার আসলে কীভাবে কাজ করে?

এয়ার কুলার হলো এক ধরনের যন্ত্র যা বায়ুকে ঠান্ডা করার জন্য বাষ্পীভবন প্রযুক্তি (Evaporative Cooling Technology) ব্যবহার করে। সহজ কথায়, এতে পানি রাখা হয় এবং একটি বিশেষ কুলিং প্যাডের মাধ্যমে ফ্যান পানি শোষণ করে। এরপর ফ্যান যখন বাতাস প্রবাহিত করে, তখন সেই বাতাস পানির সঙ্গে মিশে ঠান্ডা হয়ে রুমে ছড়িয়ে পড়ে।

শুষ্ক মৌসুমে এটি রুমের তাপমাত্রা ৫° থেকে ১৫°F পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে। বাংলাদেশের গরম ও আর্দ্র পরিবেশে সঠিক কুলার বেছে নিলে ঘরের ভেতরে অনেকটা আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।

এয়ার কুলারের জন্য অপরিহার্য বৈশিষ্ট্

১. কুলিং টাইপ নির্বাচন

  • মিনি এয়ার কুলার: ছোট ও হালকা। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য উপযোগী। সাধারণত একজন ব্যক্তিকে ঠান্ডা বাতাস দেয়।
  • রুম কুলার: পুরো ঘরের জন্য কার্যকর। মাঝারি থেকে বড় রুমে ব্যবহার করা যায়।

যদি অফিস বা পড়ার টেবিলে ব্যবহার করতে চান, মিনি কুলার যথেষ্ট। কিন্তু ড্রয়িং রুম বা শয়নকক্ষের জন্য রুম কুলারই সঠিক সমাধান।

২. পানির ট্যাংকের ক্ষমতা

  • ১৫ লিটার: ছোট ঘরের জন্য যথেষ্ট।
  • ২৫ লিটার বা তার বেশি: বড় রুমের জন্য আদর্শ।

পানির ট্যাংক যত বড় হবে, তত দীর্ঘ সময় কুলার চলবে এবং বারবার পানি ভরার ঝামেলাও কম হবে। আধুনিক কুলারে অটোফিল ফাংশন থাকে যা পানির লেভেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

৩. বরফের চেম্বার

কিছু এয়ার কুলারে আইস চেম্বার থাকে যেখানে আইস কিউব যোগ করলে ঠান্ডা হওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে এটি বড় সুবিধা।

৪. কুলিং প্যাড

কুলিং প্যাডের মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো মানের কুলিং প্যাড:

  • সহজে পরিষ্কার করা যায়।
  • দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • বেশি সময় ঠান্ডা বাতাস ধরে রাখতে পারে।

৫. বিদ্যুৎ খরচ

বাংলাদেশে বিদ্যুতের খরচ একটি বড় বিষয়। তাই লো পাওয়ার কনজাম্পশন যুক্ত এয়ার কুলার নির্বাচন করা উচিত। অনেক কুলার ১০০W–২০০W এর মধ্যে বিদ্যুৎ খরচ করে, যা এসির তুলনায় অনেক কম।

বাংলাদেশের এয়ার কুলারের দাম

বাংলাদেশে এয়ার কুলারের দাম বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হয়। যেমন—

  • কুলারের আকার
  • পানির ট্যাংকের ক্ষমতা
  • কুলিং প্যাডের ধরন
  • এয়ার ফ্লো বা বাতাস প্রবাহের শক্তি
  • ব্র্যান্ড

আনুমানিক দাম

  • মিনি এয়ার কুলার: প্রায় ৳ ১,২০০ থেকে শুরু।
  • রুম কুলার: কার্যকর রুম কুলারের দাম সাধারণত ৳ ১৩,০০০ থেকে ৳ ১৫,০০০

উচ্চমানের ব্র্যান্ডের কুলারে অতিরিক্ত ফিচার পাওয়া যায় যেমন—অটোফিল সিস্টেম, টার্বো ব্লোয়ার, ডিজিটাল ডিসপ্লে ইত্যাদি।

অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য

১. দোলন ফাংশন (Oscillation)

ঘরের প্রতিটি কোণায় সমানভাবে ঠান্ডা বাতাস ছড়ানোর জন্য এই ফিচার অপরিহার্য।

২. এয়ার ভলিউম

যত বেশি এয়ার ভলিউম, তত বেশি বাতাস চলাচল করবে। বড় রুমের জন্য এয়ার ভলিউম অবশ্যই বেশি হতে হবে।

৩. টার্বো ব্লোয়ার

অতিরিক্ত শক্তিশালী বাতাসের জন্য টার্বো ব্লোয়ারযুক্ত কুলার কার্যকর।

৪. বাষ্পীভবন ক্ষমতা

বাংলাদেশের গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে উচ্চ ইভাপোরেশন ক্যাপাসিটি যুক্ত কুলারই সেরা।

৫. সুগন্ধি ফাংশন

কিছু এয়ার কুলারে সুগন্ধি যোগ করার ফিচার থাকে, যা বাতাসকে সতেজ ও আরামদায়ক করে।

৬. ডিসপ্লে ও টাইমার

  • LCD ডিসপ্লে: সেটিংস সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • টাইমার: নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কুলার চালিয়ে রাখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

৭. শব্দের মাত্রা (Noise Level)

অতিরিক্ত শব্দ করলে ঘুমে সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে শিশু বা বৃদ্ধদের ঘরে লো নোইজ লেভেল যুক্ত এয়ার কুলারই সঠিক পছন্দ।

বাংলাদেশের সেরা এয়ার কুলার ফ্যানের মূল্য তালিকা (সেপ্টেম্বর ২০২৫)

নিচে বাংলাদেশের বাজারে জনপ্রিয় এবং ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষ এয়ার কুলারের তালিকা দেওয়া হলো:

এয়ার কুলার ফ্যান মডেলবাংলাদেশে দাম
Extonic ET-C702 Air Cooler Fan৳ ৮৯০
Vision Evaporative 45L Super Cool Air Cooler৳ ১২,৭৯৯
Race Air Cooler৳ ৯৯৯
Gree KSWK-2001DGL 20L Portable Air Cooler৳ ১৪,৯৯৯
Air Cooler Fan with Mist Flow৳ ৯৭৫
Portable Air Cooling Fan৳ ১,০২০
Extonic ET-C702 Air Cooler Fan৳ ১,৯০০
Vision Evaporative 35L Super Cool Air Cooler৳ ১২,১০০
Nova NV-920K Rechargeable Air Cooler৳ ১২,৯৯০
Gree KSWK06S61D 3-1 Tower Fan & Air Cooler(মূল্য পরিবর্তনশীল)

কেন এয়ার কুলার বেছে নেবেন?

  • সাশ্রয়ী: এসির তুলনায় অনেক কম দামে পাওয়া যায়।
  • বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী: প্রতি মাসের বিল অনেক কম।
  • সহজ ব্যবহারযোগ্য: স্থানান্তর করা যায়।
  • পরিবেশবান্ধব: রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করে না।

এয়ার কুলার কেনার আগে কিছু টিপস

  1. ঘরের আকার অনুযায়ী কুলার নির্বাচন করুন।
  2. ব্র্যান্ডের খ্যাতি ও ওয়ারেন্টি চেক করুন।
  3. বড় ট্যাংক ও অটোফিল ফিচারযুক্ত কুলার কিনুন।
  4. বিদ্যুৎ খরচ কম এমন মডেল বেছে নিন।
  5. কম শব্দ করে এমন কুলার অগ্রাধিকার দিন।

শেষ কথা

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন গরমে স্বস্তি পাওয়ার জন্য এয়ার কুলার একটি দুর্দান্ত সমাধান। সঠিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে কিনলে এটি দীর্ঘদিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়। আপনার রুমের আকার, বাজেট ও চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত এয়ার কুলার বেছে নিন।

সাশ্রয়ী বাজেটে মিনি কুলার থেকে শুরু করে প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের রুম কুলার—সবই এখন বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top