মালয়েশিয়া কনস্ট্রাকশন কাজের বেতন কত

মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধ ও দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ। নির্মাণ খাত তথা কনস্ট্রাকশন সেক্টরে কাজের প্রচুর সুযোগ-সুবিধা থাকায় বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন। এই আর্টিকেলে মালয়েশিয়ার কনস্ট্রাকশন সেক্টরে কর্মসংস্থানের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন কনস্ট্রাকশন কাজের বেতন, ভিসা তৈরি প্রক্রিয়া, আনুমানিক খরচ, এবং নিরাপদে মালয়েশিয়া যাওয়ার উপায়।

মালয়েশিয়া কনস্ট্রাকশন কাজের বেতন

মালয়েশিয়ার কনস্ট্রাকশন সেক্টরে বেতন তুলনামূলকভাবে অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে বেশি। এই খাতে একজন সাধারণ শ্রমিকের বেতন প্রতি মাসে ৪০,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা, কাজের ধরন এবং কোম্পানি অনুযায়ী বেতনে পার্থক্য দেখা যায়।

  • প্রাথমিক বেতন: সাধারণ কনস্ট্রাকশন শ্রমিকদের প্রাথমিক বেতন ৩০,০০০ টাকা থেকে ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
  • অভিজ্ঞ শ্রমিকের বেতন: একজন অভিজ্ঞ রাজমিস্ত্রি বা ইলেকট্রিশিয়ানের মাসিক বেতন ৬০,০০০ টাকা থেকে ৮০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।

মালয়েশিয়ায় কনস্ট্রাকশন কাজের বেতন মূলত কোম্পানির নীতিমালা এবং কর্মীর দক্ষতার উপর নির্ভরশীল। তবে, দালালদের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এড়িয়ে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

মালয়েশিয়া কনস্ট্রাকশন কাজ বিভিন্ন পদের বিবরণ

মালয়েশিয়ার কনস্ট্রাকশন সেক্টরে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে। লেবার, রাজমিস্ত্রি, রড মিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল কাজের জন্য প্রচুর জনবল প্রয়োজন। এই খাতে যারা কাজ করতে আগ্রহী তাদের জন্য নিম্নলিখিত পদের সুযোগ পাওয়া যায়:

  • লেবার (Labour): সাধারণ কাজ যেমন- নির্মাণ সামগ্রী বহন করা, সাইট পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি।
  • রাজমিস্ত্রি (Mason): ভবন নির্মাণ ও ইট-সিমেন্টের কাজ।
  • রড মিস্ত্রি (Steel Fixer): বিল্ডিংয়ের রড বা স্ট্রাকচার তৈরি।
  • ইলেকট্রিশিয়ান: বিল্ডিংয়ের ইলেকট্রিক সংযোগ স্থাপন ও মেরামত।

প্রতিটি কাজেই বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়। যারা কনস্ট্রাকশন কাজে মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক তাদের জন্য এইসব কাজের উপর প্রশিক্ষণ নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মালয়েশিয়া বেসিক বেতন ২০২৪

মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য যাওয়ার আগে সঠিক বেতন সম্পর্কে ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। যদিও দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে অনেক সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করা হয়, তবুও সঠিক তথ্য জানা থাকলে আপনি দালালের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে পারবেন। সাধারণত কনস্ট্রাকশন সেক্টরে প্রাথমিক বা বেসিক বেতন ৩৫,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৪০,০০০ টাকার মধ্যে থাকে।

মালয়েশিয়া যেতে খরচ কত ২০২৪ সালের আপডেটেড তথ্য

মালয়েশিয়ায় যাওয়ার খরচ গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। অতীতে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া যেতে ৬-৭ লাখ টাকার মধ্যে খরচ হলেও বর্তমানে এই ব্যয় বেড়ে প্রায় ৮-৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ভিসা ফি
  • বিমান ভাড়া
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি ও সংকলন

তবে যদি দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে যান, তাহলে এই খরচ আরো বাড়তে পারে এবং ১০-১২ লাখ টাকার মতো বাজেট রাখতে হবে। সুতরাং, সরকারি বা নির্ভরযোগ্য এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়াই উত্তম।

মালয়েশিয়া যেতে কি কি কাগজপত্র লাগে

মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় যা ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় জমা দিতে হয়। এই কাগজপত্রগুলো যথাযথভাবে তৈরি করতে হয়, যাতে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সহজে সম্পন্ন হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা নিম্নরূপ:

  1. বৈধ পাসপোর্ট
  2. জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন কার্ড
  3. সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  4. মেডিকেল রিপোর্ট
  5. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  6. বিএমইটি (BMET) কার্ড
  7. করোনা ভ্যাকসিনের সনদ
  8. অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ সনদ (যদি থাকে)

বিশেষ ক্ষেত্রে কিছু কাগজপত্রের আপডেট প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভিসা অফিস থেকে সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করা উচিত।

সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার উপায়

মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হল বৈধ ভিসা নিয়ে যাওয়া। সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রথমেই বিএমইটি (BMET) রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে একটি বিএমইটি কার্ড প্রদান করা হয়, যা পরবর্তীতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভিসা তৈরিতে সহায়ক হয়। সরকারি প্রক্রিয়ায় আবেদন ফি প্রায় ১৭,০০০ টাকা।

এই প্রক্রিয়ায় কোন দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই সহজে এবং নিরাপদে মালয়েশিয়া যাওয়া যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকি ও অতিরিক্ত খরচ এড়াতে সাহায্য করে।

মালয়েশিয়ায় কোন কাজের চাহিদা বেশি

মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে কাজের চাহিদা রয়েছে। তবে কনস্ট্রাকশন, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ডেলিভারি, ড্রাইভার, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক্যাল, ক্লিনার এবং আইটি সেক্টরে সবচেয়ে বেশি জনবলের প্রয়োজন। দক্ষ এবং অভিজ্ঞ কর্মী প্রাপ্তির জন্য মালয়েশিয়ান কোম্পানিগুলি প্রায়ই বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ করে থাকে।

  • কনস্ট্রাকশন সেক্টর: সবচেয়ে বেশি চাহিদা এই সেক্টরে।
  • হোটেল ও রেস্টুরেন্ট: বিভিন্ন পদ যেমন শেফ, ওয়েটার, এবং ক্লিনার।
  • ডেলিভারি ও ড্রাইভার: লজিস্টিক সেক্টরে বিশেষ চাহিদা রয়েছে।
  • আইটি সেক্টর: অভিজ্ঞ আইটি প্রফেশনালদের জন্যও কাজের সুযোগ রয়েছে।

প্রতিটি কাজেই দক্ষতার প্রয়োজন, তাই মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে দ্রুত কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

মালয়েশিয়া যেতে বয়স সীমা

মালয়েশিয়ার ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য বয়স সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণত কনস্ট্রাকশন সেক্টরের জন্য সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স ৪৫ বছর। তবে ফ্যামিলি বা ট্যুরিস্ট ভিসায় বয়সের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। ট্যুরিস্ট ভিসায় শিশুর ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতিপত্র প্রয়োজন হয়।

শেষ কথা

মালয়েশিয়ার কনস্ট্রাকশন ভিসার চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি। ফলে কিছু অসাধু দালাল বা এজেন্সি ভিসা ফি কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই মালয়েশিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করলে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা উচিত এবং দালালদের প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

সরকারিভাবে যাচাই করে এবং যথাযথ তথ্য জেনে আপনি মালয়েশিয়ায় কনস্ট্রাকশন কাজে যাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং নিরাপদ করতে পারেন। আশা করি এই লেখাটি মালয়েশিয়ায় কনস্ট্রাকশন কাজে যেতে ইচ্ছুকদের জন্য সহায়ক হবে। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top