পাসপোর্ট আমাদের বিদেশ যাত্রার একটি অপরিহার্য নথি। পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পর স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মধ্যে অনেকেরই কৌতূহল থাকে – আবেদনটি কি প্রসেসিংয়ের মধ্যে আছে? পাসপোর্টটি প্রস্তুত হয়েছে কিনা? এসব বিষয় জানা প্রয়োজনীয় কারণ, পাসপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত বিদেশ ভ্রমণ সম্ভব নয়। বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট এবং মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) উভয় ধরনের পাসপোর্টের জন্য স্ট্যাটাস চেক করার সুবিধা আছে। এই গাইডে আমরা পাসপোর্টের ডেলিভারি স্ট্যাটাস চেক করার সমস্ত পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব।
কেন পাসপোর্ট ডেলিভারি চেক গুরুত্বপূর্ণ
পাসপোর্ট আবেদন করার পর বিভিন্ন কারণে পাসপোর্ট ডেলিভারি চেক করা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ:
- বিলম্ব এড়ানো: পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার যে কোন ধাপে বিলম্ব হলে তা জানা সম্ভব, এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
- যাচাই ও সতর্কতা: অনেক সময় পাসপোর্ট প্রস্তুত হয় কিন্তু সেটি হাতে আসতে দেরি হতে পারে। এ সময় আপনার পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রতারণা থেকে সাবধান থাকা: বিভিন্ন প্রতারক চক্র পাসপোর্ট ডেলিভারি বা দ্রুত প্রসেসিংয়ের নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করে। তাই পাসপোর্ট স্ট্যাটাস জানার মাধ্যমে এই ধরনের ঝুঁকি থেকে সাবধান হওয়া যায়।
পাসপোর্ট ডেলিভারি চেক করার উপায়
পাসপোর্ট ডেলিভারি চেক করার কয়েকটি সহজ পদ্ধতি রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে আপনি দ্রুত ও নির্ভুলভাবে আপনার পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন।
১. ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি চেক করার অনলাইন পদ্ধতি
ই-পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক করতে সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের ই-পাসপোর্ট পোর্টালে যেতে হবে। নিচে স্টেপ-বাই-স্টেপ নির্দেশনা দেওয়া হলো:
- ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন: https://www.epassport.gov.bd/authorization/application-status এই লিংকে ক্লিক করে ই-পাসপোর্টের অফিসিয়াল পোর্টালে প্রবেশ করুন।
- তথ্য প্রদান করুন: এখানে আপনার আবেদনকৃত অ্যাপ্লিকেশন আইডি অথবা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন নম্বর সঠিকভাবে প্রদান করুন।
- জন্ম তারিখ দিন: নির্দিষ্ট স্থানে আপনার সঠিক জন্ম তারিখ টাইপ করুন।
- Captcha পূরণ করুন: “I am human” লেখা বক্সটি ক্লিক করে ক্যাপচা পূরণ করুন।
- চেক বাটনে ক্লিক করুন: সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করার পর “Check” বাটনে ক্লিক করুন।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনার পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা, যেমন – আবেদন প্রসেসিংয়ের ধাপ, প্রিন্টিং স্ট্যাটাস, ডেলিভারি শিপমেন্ট ইত্যাদি তথ্য জানতে পারবেন।
২. মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) স্ট্যাটাস চেক
যারা MRP (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) এর জন্য আবেদন করেছেন, তারা নিচের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস জানতে পারেন:
- অনলাইন চেকিং: এমআরপি চেক করার জন্য পাসপোর্ট অফিসিয়াল পোর্টাল ব্যবহার করতে পারেন। আবেদন নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিয়ে আপনি স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন।
- এসএমএসের মাধ্যমে: এমআরপি স্ট্যাটাস চেক করার আরেকটি উপায় হলো এসএমএস। আপনি মোবাইল থেকে একটি নির্দিষ্ট কোড দিয়ে এসএমএস পাঠিয়ে পাসপোর্টের স্ট্যাটাস জানতে পারেন।উদাহরণস্বরূপ:
- SMS ফরম্যাট: পাসপোর্ট <স্পেস> MRP <স্পেস> আপনার পাসপোর্ট অ্যাপ্লিকেশন নম্বর লিখে ১৬৯৪০ নাম্বারে পাঠান।
- উদাহরণ: PASSPORT MRP 123456789 পাঠিয়ে দিলে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস সম্পর্কে ফিরতি এসএমএসে তথ্য পাওয়া যাবে।
৩. সরাসরি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে চেক করা
যদি আপনার ইন্টারনেট অ্যাক্সেস বা এসএমএস পাঠানোর সুবিধা না থাকে, তবে সরাসরি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আবেদন জমা দেওয়ার রসিদ নিয়ে স্ট্যাটাস চেক করতে পারেন। এখানে আপনার আবেদনকৃত নথির একটি কপি এবং আবেদন নম্বর দেখাতে হতে পারে।
ই-পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায়
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়কাল নির্ভর করে প্রয়োজনীয়তার উপর:
- জরুরি ভিত্তিতে: জরুরি পাসপোর্ট প্রসেসিংয়ের জন্য ২ কর্ম দিবস সময় লাগে। এই ক্ষেত্রে ফি বেশি হলেও এটি দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট পাওয়ার পদ্ধতি।
- অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে: ৭-১০ কর্ম দিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রসেস সম্পন্ন করার জন্য আরেকটি মাধ্যম রয়েছে।
- সাধারণ প্রসেসিং: ২১ কর্ম দিবসের মধ্যে ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি সম্পন্ন হয়।
এছাড়া, কোন বিশেষ পরিস্থিতি বা ছুটির দিন থাকলে এই সময়কাল সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে। তবে গড়ে ২ থেকে ২১ কর্ম দিবসের মধ্যেই ই-পাসপোর্ট সাধারণত ডেলিভারি করা হয়।
পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- অ্যাপ্লিকেশন নম্বর সংরক্ষণ করুন: আবেদন জমা দেওয়ার পর আপনাকে একটি অ্যাপ্লিকেশন নম্বর প্রদান করা হয়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই নম্বর দিয়েই আপনার পাসপোর্টের স্ট্যাটাস জানা সম্ভব।
- ডকুমেন্টের যথাযথতা: আপনার জমাকৃত নথিগুলোর যথাযথতা নিশ্চিত করুন। ভুল তথ্য বা অসম্পূর্ণ ডকুমেন্টের কারণে পাসপোর্ট প্রসেসিং বিলম্বিত হতে পারে।
- মোবাইল নম্বর ও ইমেইল ঠিকানার ব্যবহার: আবেদন ফর্মে মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল ঠিকানা সঠিকভাবে উল্লেখ করুন, কারণ পাসপোর্ট প্রসেসিংয়ের স্ট্যাটাস সম্পর্কে সাধারণত মোবাইল ও ইমেইলে নোটিফিকেশন পাঠানো হয়।
- প্রতারণা থেকে সাবধান: অনেক সময় পাসপোর্ট দ্রুত পেতে বিভিন্ন প্রতারক চক্র পাসপোর্ট তৈরির নামে প্রতারণা করে। তাই সরকারি ওয়েবসাইট বা নির্ধারিত পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক বা দ্রুত ডেলিভারি তদবির করার চেষ্টা করবেন না।
শেষ কথা
পাসপোর্ট ডেলিভারি চেক করা পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারণ এটি শুধুমাত্র পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা জানাতেই সাহায্য করে না, বরং যে কোন ধরনের সমস্যা হলে তা দ্রুত সমাধানেরও সুযোগ দেয়। ই-পাসপোর্ট এবং মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দুটোই বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যবহৃত হয় এবং দুটোর জন্যই অনলাইনে স্ট্যাটাস চেক করার সুবিধা রয়েছে। অতএব, পাসপোর্ট আবেদন করার পর নিয়মিত স্ট্যাটাস চেক করুন এবং প্রতারণা এড়িয়ে নিরাপদ থাকুন।
আশা করি, এই গাইডটি আপনার পাসপোর্টের ডেলিভারি চেক সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে। ধন্যবাদ।