দুবাই টুরিস্ট ভিসার দাম কত ২০২৪

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাণকেন্দ্র এবং অর্থনৈতিক হাব হিসেবে দুবাই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। উন্নত অবকাঠামো, আধুনিক স্থাপত্য এবং অভাবনীয় বিনোদন সুবিধার জন্য এই শহরটি পর্যটকদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। দুবাই ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন। এই পোস্টে আমরা বিশেষ করে দুবাই টুরিস্ট ভিসার খরচ, প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো।

পোষ্টের বিষয়বস্তু

দুবাই টুরিস্ট ভিসার ধরন ও মূল্য নির্ধারণ

প্রত্যেক দেশ থেকে দুবাইয়ে আসা পর্যটকদের জন্য ভিসার আলাদা আলাদা ক্যাটাগরি রয়েছে। তাই আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণে আগ্রহী হন, তাহলে আপনার জানা দরকার কোন ভিসার খরচ কত। ভিসার ধরণ অনুযায়ী যেমন টুরিস্ট ভিসা এবং ভিজিট ভিসার ক্ষেত্রে খরচ আলাদা হয়ে থাকে, তেমনি মেয়াদ, এন্ট্রি সংখ্যা এবং অন্যান্য শর্তের উপর ভিত্তি করেও খরচের পার্থক্য হয়।

১. টুরিস্ট ভিসা সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ মেয়াদী

টুরিস্ট ভিসা মূলত দুই ধরনের হয়:

  • ৩০ দিনের সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা
  • ৩০ দিনের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা
  • ৯০ দিনের সিঙ্গেল এবং মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা

প্রতিটি ক্যাটাগরির জন্য আলাদা মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

৩০ দিনের সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা

এই ভিসাটি মূলত এক মাসের জন্য কার্যকর থাকে এবং এর জন্য খরচ হয় ৩৫০ দিরহাম বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০,০০০ টাকা।

৩০ দিনের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা

এই ভিসার মাধ্যমে পর্যটকরা ৩০ দিনের মধ্যে একাধিকবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে পারেন। এর খরচ প্রায় ৬৫০ দিরহাম, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৯,০০০ টাকা।

৯০ দিনের সিঙ্গেল এবং মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা

যারা দীর্ঘ সময়ের জন্য ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য ৯০ দিনের ভিসা আদর্শ। একাধিকবার প্রবেশের জন্য এই ভিসার খরচ প্রায় ২৫০০ দিরহাম, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৫,০০০ টাকা।

দুবাই টুরিস্ট ভিসার প্রক্রিয়া কীভাবে আবেদন করবেন

দুবাই টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া বেশ সহজ। বাংলাদেশ থেকে আপনি সাধারণত দুটি উপায়ে আবেদন করতে পারেন: ১. ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ২. এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে

ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন

ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করা অনেকেই সহজ মনে করেন, কারণ এতে ভিসা প্রসেসিং, ডকুমেন্টেশন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া তাদের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। তবে সেক্ষেত্রে এজেন্সির ফি সহ মোট খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে। একটি ভালো এবং নির্ভরযোগ্য এজেন্সি নির্বাচন করা জরুরি, যাতে আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।

এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে আবেদন

বিভিন্ন এয়ারলাইন্স যেমন এমিরেটস, ফ্লাই দুবাই ইত্যাদি কোম্পানি ভিসা প্রসেসিং সার্ভিস দিয়ে থাকে। তারা আপনার ভিসার জন্য সরাসরি আবেদন করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় এজেন্সি ফি বাদ দিয়ে খরচ কিছুটা কমে যায়। তবে আবেদনকারীকে তাদের শর্তাবলী মেনে চলতে হয়।

ভিসা প্রসেসিং সময়সীমা

দুবাই টুরিস্ট ভিসা পেতে সাধারণত ৩০ থেকে ৯০ দিন সময় লাগে। তবে এজেন্সি বা এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে আবেদন করলে কিছু ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভিসা পাওয়া যায়। কিছু এজেন্সি অতিরিক্ত চার্জ নিয়ে দ্রুত প্রসেসিং সেবা প্রদান করে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি ১০ দিনের মধ্যেও ভিসা পেতে পারেন।

দুবাই ভ্রমণে আনুমানিক খরচ

দুবাই ভ্রমণের জন্য ভিসা, বিমান ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত করে মোট বাজেট নির্ধারণ করা উচিত। সাধারণত দুবাই ভ্রমণের জন্য আনুমানিক খরচ হয় ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। তবে খরচের উপর নির্ভর করে এটি কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। নিচে বিভিন্ন খরচের বিবরণ দেওয়া হলো:

  • ভিসা ফি: ১০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
  • বিমান ভাড়া: সিজনের উপর নির্ভর করে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে হতে পারে।
  • হোটেল খরচ: দুবাইয়ে থাকার খরচও বিভিন্ন ধরনের হোটেল এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে। সাধারণ হোটেলে থাকার খরচ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা প্রতিদিন, তবে বিলাসবহুল হোটেলে থাকার খরচ অনেক বেশি।

ভিসা আবেদন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

দুবাই ভ্রমণের জন্য সঠিক ভিসা ক্যাটাগরি নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া কিছু বিশেষ শর্তাবলী রয়েছে, যা মেনে চলা বাধ্যতামূলক।

১. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

ভিসা আবেদনের জন্য নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়:

  • পাসপোর্টের কপি (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (প্রয়োজনে)
  • টিকেট বুকিং (কিছু ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্স এর মাধ্যমে আবেদন করলে)

২. ভিসা আবেদন ফি ফেরতযোগ্য নয়

দুবাই টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন ফি একবার জমা দেওয়ার পর তা ফেরতযোগ্য নয়। যদি কোনো কারণে আপনার ভিসা বাতিল হয়ে যায় বা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে আবেদন ফি ফেরত পাওয়া যাবে না।

৩. ভিসা প্রসেসিং আপডেট

ভিসা আবেদন করার পর নির্দিষ্ট এজেন্সি বা এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং সম্পর্কে আপডেট জানুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনলাইনে স্ট্যাটাস চেক করার সুবিধা থাকে, যা আপনাকে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানায়।

দুবাইয়ের আকর্ষণীয় স্থানসমূহ

দুবাইয়ে ভ্রমণকারীদের জন্য অসংখ্য আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। এখানে কিছু জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রের তালিকা দেওয়া হলো:

১. বুর্জ খলিফা

বিশ্বের সর্বোচ্চ টাওয়ার, বুর্জ খলিফা, দুবাইয়ের আইকনিক ল্যান্ডমার্ক হিসেবে পরিচিত। এখানে আপনি টপ অব দ্যা টাওয়ার থেকে পুরো শহরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

২. দুবাই মল

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শপিং মল, দুবাই মলে শুধু কেনাকাটা নয়, আছে বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা। এখানে রয়েছে আকুরিয়াম, স্কেটিং রিঙ্ক, এবং অসংখ্য ব্র্যান্ডেড দোকান।

৩. দুবাই মারিনা

দুবাই মারিনার নাইটলাইফ এবং জলবায়ু পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন প্রকারের রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফে রয়েছে, যেখানে আপনি ভিন্ন স্বাদের খাবার উপভোগ করতে পারেন।

৪. জুমেইরাহ বিচ

দুবাইয়ের অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত জুমেইরাহ বিচ। সৈকতের সৌন্দর্য এবং শিথিলতার জন্য এটি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় স্থান।

শেষ কথা

দুবাই ভ্রমণ বাংলাদেশের অনেকের স্বপ্ন। আধুনিকতা, উন্নত মানের জীবনযাপন এবং বিনোদনের অসীম সুযোগের জন্য দুবাই বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই পোস্টে আমরা দুবাই টুরিস্ট ভিসার খরচ, আবেদন প্রক্রিয়া এবং ভ্রমণের আনুষঙ্গিক খরচ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছি। আশা করি, এই তথ্যগুলো আপনার দুবাই ভ্রমণ পরিকল্পনায় সহায়ক হবে।

যদি এই পোস্টটি আপনার জন্য সহায়ক হয়, তবে আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিতদের সাথে এটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top