টনসিলের ব্যথা একটি ছোট্ট সমস্যা মনে হলেও, এর কষ্টের গভীরতা বুঝতে পারে কেবল ভুক্তভোগীই। গলা ব্যথা, কথা বলতে সমস্যা, এমনকি খাবার গিলতেও যন্ত্রণা হয়। টনসিলের প্রদাহের সময় যদি আপনি কিছু খাবারের ব্যাপারে অসতর্ক হন, তবে ব্যথা ও সংক্রমণ উভয়ই বেড়ে যেতে পারে। তাই জানতে হবে—টনসিল হলে কোন খাবার খাওয়া উচিত নয় এবং কোন খাবার গলা আরাম দেয়।
টনসিল হলে কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবে না
টনসিলের সময় এমন কিছু খাবার রয়েছে যা গলার প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়, সংক্রমণকে দীর্ঘায়িত করে বা ব্যথা তীব্র করে তোলে। নিচে সেইসব খাবারের বিস্তারিত তালিকা ও কারণ উল্লেখ করা হলো।
১. তীব্র মশলাযুক্ত খাবার
ঝাল মরিচ, চাটনি, পিকল বা অতিরিক্ত মশলাদার তরকারি গলার কোমল টিস্যুতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। এগুলো টনসিলের প্রদাহ বাড়িয়ে দেয় এবং গিলতে কষ্ট করে তোলে।
বিকল্প: হালকা মশলার সবজি বা নরম ডালভাত খেতে পারেন।
২. আঁচড়ানো ও শক্ত খাবার
টোস্ট, বাদাম, ক্রিসপি চিপস, পপকর্ন বা শক্ত বিস্কুট—এগুলো গলার প্রদাহিত টিস্যুকে ঘষে দেয়। ফলস্বরূপ ব্যথা বেড়ে যায়, কখনও কখনও রক্তপাতও হতে পারে।
বিকল্প: নরম খাবার যেমন খিচুড়ি, মুসুর ডাল, বা স্যুপ গ্রহণ করুন।
৩. খাট্টা বা অ্যাসিডিক খাবার
লেবু, কমলালেবু, টমেটো, আনারস বা ভিনেগারজাত খাবারে থাকে প্রাকৃতিক অ্যাসিড, যা টনসিলের ক্ষতস্থানে জ্বালা সৃষ্টি করে।
বিকল্প: খাট্টাহীন ফল যেমন কলা, পাকা পেঁপে, আপেল (খোসা ছাড়ানো) খেতে পারেন।
৪. গরম পানীয় ও খাবার
গরম চা, কফি বা স্যুপ অনেকেই আরামের জন্য পান করেন, কিন্তু অতিরিক্ত গরম খাবার গলার প্রদাহিত অংশে তাপজনিত জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে দেয়।
বিকল্প: কুসুম গরম পানি বা হালকা গরম হার্বাল চা পান করুন।
৫. অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার ও পানীয়
আইসক্রিম বা বরফ ঠান্ডা পানীয় সাময়িকভাবে গলা ঠান্ডা করলেও, পরবর্তীতে এটি প্রদাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বিকল্প: ঘরের তাপমাত্রার পানীয় পান করা উত্তম।
৬. কঠিন ফল ও মাংস
আপেল, গাজর, বা শক্ত মাংস চিবাতে সময় লাগে এবং গলার ওপর চাপ ফেলে। ফলে টনসিলের ব্যথা আরও তীব্র হয়।
বিকল্প: নরম ফল বা ভালোভাবে সিদ্ধ করা মাংস খান।
৭. অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়
অ্যালকোহল গলা শুষ্ক করে তোলে, যার ফলে প্রদাহ ও জ্বালাপোড়া বেড়ে যায়। এছাড়া এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল করে।
বিকল্প: হাইড্রেট থাকার জন্য পানি, নারকেল পানি বা হালকা হার্বাল ড্রিংকস পান করুন।
৮. ধূমপান ও ধোঁয়া যুক্ত পরিবেশ
সিগারেটের ধোঁয়া গলার টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত করে, সংক্রমণ বাড়ায় এবং আরোগ্যের প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়।
পরামর্শ: টনসিলের সময়ই নয়, ভবিষ্যতের জন্যও ধূমপান সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা শ্রেয়।
টনসিল হলে যে খাবারগুলো গলা আরাম দেয়
খাবারের মাধ্যমে অনেকটা আরাম পাওয়া সম্ভব, যদি আপনি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে খাদ্য নির্বাচন করেন। নিচে কিছু গলাবান্ধব খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যা প্রদাহ কমাতে এবং গলা সুরক্ষায় সাহায্য করে।
১. নরম ও হালকা খাবার
খিচুড়ি, স্যুপ, ওটমিল, ম্যাশড পটেটো, ডিমভাজি, সেদ্ধ ভাত—এসব খাবার সহজে গিলে ফেলা যায় এবং গলার উপর চাপ কমায়।
নরম খাবার শুধু হজমে সাহায্য করে না, বরং গলার টিস্যুকে প্রশমিত করে।
২. ঠান্ডা কিন্তু অতিরিক্ত নয় এমন খাবার
ঠান্ডা দই, শরবত বা ঘরের তাপমাত্রার আইসক্রিম গলার জ্বালাপোড়া সাময়িকভাবে কমিয়ে দেয়। তবে বরফের মতো ঠান্ডা খাবার পরিহার করতে হবে।
৩. লবণাক্ত গরম পানি
কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে দিনে ৩–৪ বার গার্গল করুন। এটি প্রদাহ কমায়, ব্যথা উপশম করে এবং জীবাণু ধ্বংসে সহায়তা করে।
৪. আদা বা তুলসী চা
আদার প্রদাহনাশক গুণ গলা ব্যথা কমাতে দারুণ কার্যকর। তুলসী পাতা, মধু ও লেবুর হালকা সংমিশ্রণও গলার জন্য উপকারী, তবে খাট্টা না বাড়িয়ে সতর্কভাবে ব্যবহার করতে হবে।
৫. মধু ও লেবুর পানি (সামান্য গরমে)
মধুতে থাকে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ। সকালে এক কাপ কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করলে গলা নরম থাকে এবং সংক্রমণ হ্রাস পায়।
৬. প্রচুর পানি পান করা
ডিহাইড্রেশন টনসিলের প্রদাহকে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সারাদিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরি।
শেষ কথা
টনসিলের সমস্যা সাধারণ হলেও অবহেলা করলে এটি জটিল রূপ নিতে পারে। তাই সঠিক খাবার বেছে নেওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখবেন, গলার যত্ন মানেই আপনার শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার যত্ন।
যদি আপনি নিয়মিত টনসিলের সমস্যায় ভোগেন, তবে আপনার খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশ এবং দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন আনুন। সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন—এবং নিজের গলার যত্ন নিন ।



