মালয়েশিয়া ভিসা কবে খুলবে ২০২৫

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রবণতা বরাবরই অনেক বেশি। উন্নত কর্মসংস্থান, স্থিতিশীল আয় এবং প্রবাসী জীবনের সুযোগ-সুবিধা অনেক বাংলাদেশিকে এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির প্রতি আকৃষ্ট করে। তবে মাঝে মাঝেই মালয়েশিয়া সরকার বিভিন্ন কারণে ভিসা প্রদান স্থগিত বা সীমিত করে। তাই যারা মালয়েশিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান, তাদের জন্য মালয়েশিয়া ভিসা কবে খুলবে ২০২৫ – এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই নিবন্ধে আমরা মালয়েশিয়া ভিসার বর্তমান অবস্থা, কলিং ভিসা ও কোম্পানি ভিসার নিয়মকানুন, শ্রমবাজারের চাহিদা, খাতভিত্তিক কর্মসংস্থান, সরকারের সর্বশেষ নীতি এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ তুলে ধরব।

মালয়েশিয়া ভিসা ২০২৫ – বর্তমান অবস্থা

২০২৫ সালে মালয়েশিয়া ভিসা চালু রয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থিত মালয়েশিয়া হাই কমিশন ইতিমধ্যেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ফলে কর্মসংস্থানের জন্য মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুকদের জন্য এটি একটি ইতিবাচক খবর।

বিশেষ করে কলিং ভিসা (Calling Visa) এবং কোম্পানি ভিসা (Company Visa) নিয়ে আগ্রহীদের জন্য এখনই সঠিক সময়। তবে মনে রাখতে হবে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো সবসময় সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে হতে হবে। অননুমোদিত এজেন্ট বা দালালের মাধ্যমে গেলে প্রতারণার শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

কেন মালয়েশিয়া ভিসা বন্ধ হয়েছিল?

মালয়েশিয়া গত দুই বছর বিদেশি শ্রমিকদের জন্য ভিসা বন্ধ রেখেছিল। এর পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ ছিল—

  • অবৈধ অভিবাসী বৃদ্ধি: আগের শ্রমিক কোটা ব্যবস্থায় অনেক শ্রমিক ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও দেশে ফেরেনি।
  • শ্রমবাজারে অসঙ্গতি: কিছু খাতে শ্রমিক সংকট ছিল, আবার কিছু খাতে অতিরিক্ত জনশক্তি তৈরি হয়েছিল।
  • অর্থনৈতিক নীতি পরিবর্তন: কোভিড-১৯ এর প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতি পুনর্গঠনে মালয়েশিয়া কিছুটা সময় নিয়েছিল।
  • শ্রমিকদের সুরক্ষা: অবৈধ নিয়োগকর্তাদের কারণে অনেক শ্রমিক সমস্যায় পড়েছিল। এ কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কঠোরতা আনা হয়েছে।

মালয়েশিয়া কলিং ভিসা কবে খুলবে ২০২৫

দীর্ঘ বিরতির পর ২০২৫ সালে মালয়েশিয়া সরকার আবারও কলিং ভিসা চালু করেছে। ঘোষিত কোটার আওতায় এবার প্রায় ২৪ লাখ ৬৭ হাজার বিদেশি শ্রমিক নেওয়া হবে। এই কোটা চলবে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত

কোন কোন খাতে শ্রমিক নেওয়া হবে

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসিউশন ইসমাইল জানিয়েছেন, শ্রমিক নেওয়া হবে মোট ১৩টি খাতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

  • কৃষি ও বাগান
  • খনি ও খননকাজ
  • হোলসেল ও রিটেল ব্যবসা
  • গুদাম ও লজিস্টিকস
  • হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ক্যাটারিং
  • লন্ড্রি সার্ভিস
  • কার্গো হ্যান্ডলিং
  • বিল্ডিং ক্লিনিং ও ফ্যাসিলিটি ম্যানেজমেন্ট
  • নির্মাণ খাত (শুধু সরকারি প্রকল্পে)
  • উৎপাদন শিল্প (বিশেষত নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পে)

মালয়েশিয়া ভিসা ২০২৫ – নতুন নিয়ম ও পরিবর্তন

২০২৫ সালে ভিসা ব্যবস্থায় কিছু বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা বাংলাদেশি শ্রমিকদের জানা অত্যন্ত জরুরি।

  1. সরাসরি আবেদন নয়: এবার কোনো নিয়োগকর্তা বা এজেন্ট সরাসরি আবেদন করতে পারবে না।
  2. অফিসিয়াল এজেন্সি: কেবল অনুমোদিত খাতভিত্তিক এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।
  3. যাচাই প্রক্রিয়া: প্রতিটি আবেদন যাচাই করবে Foreign Workers Technical Committee (FWTC)
  4. চূড়ান্ত অনুমোদন: যৌথ কমিটি (Joint Committee) অনুমোদন দেবে।
  5. শ্রমিক সীমাবদ্ধতা: ভবিষ্যতে মালয়েশিয়া পরিকল্পনা করেছে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা দেশের মোট শ্রমশক্তির সর্বোচ্চ ১০% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে

বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়া ভিসা প্রক্রিয়া

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে যেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে—

  • বোয়েসেল (BOESL) – বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড
  • বিএমইটি (BMET) – ব্যুরো অফ ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং
  • প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়

এই সংস্থাগুলো অনুমোদিত এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করে এবং নিয়মিত আপডেট দেয়। ফলে প্রতারণার ঝুঁকি কমে।

মালয়েশিয়ায় কাজের ভিসার ধরন

বাংলাদেশ থেকে সাধারণত দুই ধরনের ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়া যায়—

১. কলিং ভিসা (Calling Visa)

  • এটি মূলত শ্রমিক নিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে দেওয়া হয়।
  • কম দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য।
  • সাধারণত কৃষি, নির্মাণ, কারখানা, সার্ভিস সেক্টর ইত্যাদিতে কাজের সুযোগ থাকে।

২. কোম্পানি ভিসা (Company Visa)

  • কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানি সরাসরি কর্মী নিয়োগ করলে এই ভিসা দেওয়া হয়।
  • দক্ষ শ্রমিক বা টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের জন্য বেশি প্রচলিত।
  • বেতন ও সুবিধা তুলনামূলক বেশি।

মালয়েশিয়ায় কাজের সুবিধা ও সুযোগ

বাংলাদেশি শ্রমিকরা কেন মালয়েশিয়াকে এতটা পছন্দ করে, তার কয়েকটি প্রধান কারণ হলো—

  • তুলনামূলকভাবে বেশি বেতন
  • অতিরিক্ত ওভারটাইম আয়ের সুযোগ
  • খাদ্য, বাসস্থান ও পরিবহন সুবিধা
  • নিকটবর্তী দেশ হওয়ায় সহজ যাতায়াত
  • সাংস্কৃতিক মিল এবং প্রবাসী সম্প্রদায়ের শক্তিশালী উপস্থিতি

বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

১. শুধু সরকারি অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করুন।
২. দালালের প্রলোভনে ভিসা বা চাকরির জন্য অর্থ প্রদান করবেন না।
৩. BOESL ও BMET এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন।
৪. মালয়েশিয়ার শ্রম আইন ও নিয়মকানুন আগে থেকেই জেনে নিন।
৫. কোনো সমস্যা হলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

শেষ কথা

২০২৫ সালের জন্য মালয়েশিয়া কলিং ভিসা ও কোম্পানি ভিসা উন্মুক্ত হওয়া বাংলাদেশিদের জন্য একটি বড় সুযোগ। দীর্ঘ দুই বছরের স্থবিরতার পর এবার নতুন নীতি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম চালু হয়েছে। তবে এবার নিয়মকানুন কঠোর হওয়ায় প্রতারণার সুযোগ কমবে এবং শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।

আজকের খবর অনুযায়ী – মালয়েশিয়া ভিসা ২০২৫ বর্তমানে চালু রয়েছে। তাই যারা মালয়েশিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান, এখনই সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে আবেদন শুরু করতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top