ড্রিম হলিডে পার্ক টিকেট মূল্য ২০২৫

বাংলাদেশের বিনোদন সংস্কৃতিতে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত নামগুলোর একটি হলো ড্রিম হলিডে পার্ক। নরসিংদী জেলার হৃদয়ে অবস্থিত এই বিনোদন কেন্দ্রটি আজ শুধুমাত্র স্থানীয় পর্যটকদের নয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৬০ একর বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই আধুনিক পার্কে রয়েছে অনন্য সব রাইড, পানির রাজ্যে খেলার আয়োজন এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার অসংখ্য সুযোগ।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থানের কারণে পার্কটিতে পৌঁছানোও অত্যন্ত সহজ। ব্যস্ত নগর জীবনের ক্লান্তি ঝেড়ে কয়েক ঘণ্টার ড্রাইভেই আপনি চলে যেতে পারেন এক ভিন্ন জগতে, যেখানে অপেক্ষা করছে হাসি, আনন্দ আর নিরবচ্ছিন্ন বিনোদন।

এই দীর্ঘ প্রবন্ধে আমরা ড্রিম হলিডে পার্কের ইতিহাস, রাইড, টিকিটের দাম, প্যাকেজ অফার, ভ্রমণ টিপস, যাতায়াত ব্যবস্থা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবো। যারা ভবিষ্যতে পার্কে ঘুরে আসার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এটি হবে এক পূর্ণাঙ্গ গাইড।

পোষ্টের বিষয়বস্তু

ড্রিম হলিডে পার্কের জন্ম ও বিকাশ

ড্রিম হলিডে পার্কের যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি ক্রমাগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুরুতে সীমিত কিছু রাইড থাকলেও সময়ের সাথে সাথে যোগ হয়েছে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, সাফারি পার্ক, থ্রিল রাইড, নৌকা ভ্রমণ, সাইকেল রাইড এবং শিশুদের জন্য নিরাপদ বিনোদনের আলাদা কর্নার।

শুধু রাইড নয়, পার্কটির স্থাপত্যশৈলী, সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও এটিকে অন্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোর থেকে আলাদা করেছে। এখন এটি শুধু একটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক নয়, বরং নরসিংদীর সাংস্কৃতিক ও আধুনিক বিনোদনের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

রাইড ও আকর্ষণ রোমাঞ্চ আর আনন্দের অসীম ভাণ্ডার

ড্রিম হলিডে পার্কে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়ে এর বৈচিত্র্যময় রাইড সমাহার। বর্তমানে এখানে ৩০টিরও বেশি প্রধান আকর্ষণ রয়েছে। নিচে সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু বিনোদন ব্যবস্থার বিবরণ দেওয়া হলো:

১. ওয়াটার ওয়ার্ল্ড – জলের রাজ্যে আনন্দের মহোৎসব

গ্রীষ্মের তাপদাহে সতেজতা পেতে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড হলো সেরা পছন্দ। এখানে রয়েছে ওয়েভ পুল, স্লাইড, রেইন ড্যান্স এবং শিশুদের জন্য বিশেষ ওয়াটার প্লে জোন। পরিবারসহ ভিজে মজা করার জন্য এটি একটি অন্যতম আকর্ষণ।

২. সাফারি পার্ক – প্রকৃতির মাঝে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা

বন্যপ্রাণী ও কৃত্রিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা সাফারি পার্ক ভ্রমণকারীদের ভিন্ন স্বাদ দেয়। এখানে হাঁটতে হাঁটতে কিংবা ছোট ট্রেনে চড়েই উপভোগ করা যায় এক চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা।

৩. জেড ফাইটার – তরুণদের প্রিয় রোমাঞ্চকর রাইড

এটি পার্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় থ্রিল রাইডগুলির একটি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এই রাইডে উঠে তরুণ-তরুণীরা অনুভব করে অ্যাডভেঞ্চারের ভিন্ন স্বাদ।

৪. স্পিড বোট – হ্রদের বুকে দ্রুতগতির যাত্রা

যারা পানির বুকে দ্রুতগতি পছন্দ করেন, তাদের জন্য রয়েছে স্পিড বোট রাইড। এটি শুধু রোমাঞ্চকরই নয়, বরং পার্কের সৌন্দর্যকে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকেও উপভোগ করার সুযোগ দেয়।

৫. বাম্পার কার ও ট্রেন রাইড – শিশুদের আনন্দের ভাণ্ডার

শিশুদের জন্য রয়েছে বাম্পার কার, মিনি ট্রেন এবং সাইকেল রাইড। পরিবারের ছোটদের নিয়ে নিরাপদ ও আনন্দঘন সময় কাটানোর জন্য এগুলো আদর্শ।

৬. পিকনিক স্পট – আড্ডা আর উৎসবের স্বর্গ

পার্কের ভেতরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট। যেখানে বড় গ্রুপ কিংবা পরিবার সহজেই আয়োজন করতে পারে বার্ষিক অনুষ্ঠান, কর্পোরেট পিকনিক কিংবা ব্যক্তিগত উৎসব।

টিকিটের দাম সাশ্রয়ী থেকে বিলাসবহুল প্যাকেজ

ড্রিম হলিডে পার্কের টিকিট ব্যবস্থা বেশ বৈচিত্র্যময়। আপনার প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী এখানে পাবেন সাধারণ প্রবেশ টিকিট থেকে শুরু করে বিশেষ প্যাকেজ সুবিধা।

সাধারণ প্রবেশ টিকিট

  • প্রাপ্তবয়স্ক: ৩২০ টাকা
  • শিশু: ২০০ – ২২০ টাকা

এটি কেবল প্রবেশের অনুমতি দেয়, তবে রাইড ও বিশেষ আকর্ষণের জন্য আলাদা টিকিট কিনতে হয়।

রাইড ও বিশেষ আকর্ষণের টিকিট

  • ওয়াটার ওয়ার্ল্ড প্রবেশ: জনপ্রতি ৩৫০ টাকা
  • অন্যান্য রাইড: রাইড ভেদে ভিন্ন মূল্য

প্যাকেজ টিকিট (২০২৫ সালের হালনাগাদ)

ড্রিম হলিডে পার্কে কিছু আকর্ষণীয় প্যাকেজ রয়েছে, যা পরিবার বা কাপলদের জন্য বেশ জনপ্রিয়।

  • ফ্যামিলি প্যাকেজ: ৪ জনের জন্য ৪৫০০ – ৫০০০ টাকা। এতে ২০টিরও বেশি রাইড, ওয়াটার ওয়ার্ল্ড ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ অন্তর্ভুক্ত।
  • কাপল প্যাকেজ: প্রায় ২৫০০ টাকায় দুইজনের জন্য বিশেষ আকর্ষণসমূহ।
  • পিকনিক প্যাকেজ:
    • ছোট স্পট ভাড়া: প্রায় ৫০,০০০ টাকা থেকে শুরু।
    • বড় স্পট ভাড়া: ২ – ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

পিকনিক আয়োজনের জন্য আগে থেকেই বুকিং করা জরুরি, বিশেষ করে বড় দল বা কর্পোরেট ইভেন্টের জন্য।

খোলা-বন্ধের সময়সূচি

ড্রিম হলিডে পার্ক প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সপ্তাহের কোনো নির্দিষ্ট ছুটির দিন নেই। অর্থাৎ, বছরের প্রায় সব দিনই পার্কে ভ্রমণ করা সম্ভব।

যাতায়াত ব্যবস্থা কিভাবে পৌঁছাবেন?

পার্কটির অবস্থান নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা চৈতাব এলাকায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে।

  • ঢাকা থেকে দূরত্ব: গাড়িতে ১ থেকে ২ ঘণ্টার পথ
  • নিজস্ব গাড়ি: সহজ ও আরামদায়ক উপায়
  • পাবলিক বাস সার্ভিস: ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে চলাচল করে, যা আপনাকে সরাসরি পার্কের কাছাকাছি নামিয়ে দেবে।

ভ্রমণ টিপস আনন্দময় অভিজ্ঞতার জন্য প্রস্তুতি

ড্রিম হলিডে পার্ক ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক ও ঝামেলামুক্ত করতে নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখুন:

  1. পর্যাপ্ত পানি বহন করুন: গরমে ঘুরাঘুরির সময় শরীর হাইড্রেটেড রাখা জরুরি।
  2. শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন: রাইডে ওঠার আগে নির্দেশিকা মেনে চলুন।
  3. ক্যামেরা সঙ্গে রাখুন: পার্কের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আর স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে।
  4. খাবারের প্রস্তুতি: পার্কের ভেতর খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও চাইলে হালকা খাবার সঙ্গে নিতে পারেন।
  5. সময় ম্যানেজ করুন: প্রতিটি রাইডের আলাদা সময়সূচি থাকতে পারে, তাই আগেই জেনে নিন।

ড্রিম হলিডে পার্ক কেন ঘুরে আসবেন?

  • বৈচিত্র্যময় বিনোদন: শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, সবার জন্য কিছু না কিছু আছে।
  • আধুনিক সুযোগ-সুবিধা: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, খাবারের দোকান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
  • প্রকৃতির সান্নিধ্য: শুধু রাইড নয়, সবুজ প্রকৃতি ও মুক্ত বাতাসও এখানে বড় আকর্ষণ।
  • গ্রুপ আয়োজনের সুযোগ: পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা কর্পোরেট টিমের জন্য পিকনিক স্পট।

শেষ কথা

ড্রিম হলিডে পার্ক নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিনোদনকেন্দ্র। যারা শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি খুঁজছেন বা প্রিয়জনদের নিয়ে কাটাতে চান আনন্দঘন সময়, তাদের জন্য এটি একটি নিখুঁত গন্তব্য।

এখানে একদিকে রয়েছে আধুনিক বিনোদনের সব আয়োজন, অন্যদিকে প্রকৃতির স্নিগ্ধ ছোঁয়া। তাই পরিবার, বন্ধু কিংবা সহকর্মীদের নিয়ে ড্রিম হলিডে পার্ক ভ্রমণ হতে পারে স্মরণীয় অভিজ্ঞতার এক নতুন অধ্যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top