কিসমিস এমন একটি খাবার যা শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্য অসাধারণ উপকারী। শুকনো আঙুর থেকে তৈরি এই প্রাকৃতিক খাদ্যটিতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। বাংলাদেশের বাজারে কিসমিসের দাম ও প্রকারভেদ নিয়ে ক্রেতাদের কৌতূহল প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কোথাও দাম একটু বেশি, কোথাও আবার কম, আবার প্রকারভেদে দাম ও গুণগতমানেও ভিন্নতা থাকে। এই দীর্ঘ আকারের নিবন্ধে আমরা কিসমিসের বর্তমান বাজারদর, বিভিন্ন প্রকার, গুণাগুণ, ভালো কিসমিস চেনার উপায় এবং কিসমিস সম্পর্কিত নানা দিক বিশদভাবে আলোচনা করবো।
কিসমিসের উৎপত্তি ও ইতিহাস
কিসমিস মূলত শুকনো আঙুর। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, হাজার বছর ধরে মানুষ আঙুর শুকিয়ে কিসমিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। প্রাচীন মিশর, রোমান সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত কিসমিস ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় খাদ্যদ্রব্য। একসময় যুদ্ধের রসদ হিসেবে কিসমিস ব্যবহৃত হতো, কারণ এটি দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায় এবং দ্রুত শক্তি জোগায়। আজও কিসমিসের গুরুত্ব কমেনি; বরং স্বাস্থ্যসচেতন প্রজন্ম এটিকে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে।
বাংলাদেশে কিসমিসের বাজার পরিস্থিতি
বাংলাদেশে কিসমিস মূলত আমদানি-নির্ভর একটি পণ্য। আফগানিস্তান, ইরান, ভারত, তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে কিসমিস আমদানি করা হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারদর, পরিবহন ব্যয় ও ট্যাক্স নির্ভর করে দেশীয় বাজারে দাম ওঠানামা করে।
বর্তমানে কিসমিসের সাধারণ দাম প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। তবে এর চেয়ে উন্নত মানের বা বিশেষ ধরনের কিসমিসের দাম ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
১ কেজি কিসমিসের দাম কত?
- সাধারণ মানের কিসমিস: ৬৫০–৯০০ টাকা প্রতি কেজি
- উন্নত মানের কিসমিস: ১০০০–১৫০০ টাকা প্রতি কেজি
- প্রিমিয়াম মানের কিসমিস: ১৬০০–২০০০ টাকা প্রতি কেজি
এছাড়া বাজারের চাহিদা ও মৌসুমি পরিবর্তনের কারণে দাম কিছুটা বাড়তে বা কমতে পারে। রাজধানী ঢাকায় দাম তুলনামূলক বেশি হলেও গ্রামীণ হাটবাজারে অনেক সময় কিছুটা সস্তা পাওয়া যায়।
১০০ গ্রাম কিসমিসের দাম
অনেক ক্রেতা বেশি দাম এড়াতে অল্প পরিমাণ কিসমিস কিনতে চান। এ জন্য দোকানগুলোতে ১০০ গ্রাম বা আধা কেজি কিসমিসের প্যাকেট সহজলভ্য।
- সাধারণ মানের ১০০ গ্রাম কিসমিস: ৬০–৯০ টাকা
- উন্নত মানের ১০০ গ্রাম কিসমিস: ১০০–২০০ টাকা
বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী, ছোট পরিবার কিংবা এককালীন ব্যবহারকারীরা এই ছোট প্যাকেট কিনতেই বেশি আগ্রহী।
কালো কিসমিসের দাম ও উপকারিতা
কালো কিসমিস অন্যান্য কিসমিসের তুলনায় বেশি দামি হলেও এর গুণাগুণ অসাধারণ। বর্তমানে কালো কিসমিসের দাম –
- সাধারণ মানের কালো কিসমিস: ১৪০০–১৫০০ টাকা প্রতি কেজি
- উন্নত মানের কালো কিসমিস: ১৬০০–১৮০০ টাকা প্রতি কেজি
কালো কিসমিসের উপকারিতা:
- হাড়ের ঘাটতি পূরণ করে।
- শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়ায়।
- দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
- ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী।
- পরিপাকতন্ত্র উন্নত করে।
ভালো কিসমিস চেনার সহজ কৌশল
ভালো মানের কিসমিস কিনতে গেলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের কিসমিস বিক্রি করে থাকে।
ভালো কিসমিস চেনার উপায়:
- আকারে বড় ও মাংশল হবে।
- দেখতে যদি অতিরিক্ত উজ্জ্বল হয় তবে বুঝতে হবে কৃত্রিম রং বা রাসায়নিক মেশানো।
- খুব ছোট বা বেশি শুকনো হলে মান কম হতে পারে।
- হাতে নিয়ে গন্ধ পরীক্ষা করলে অস্বাভাবিক বা রাসায়নিক গন্ধ থাকলে সেটি এড়িয়ে চলা উচিত।
কিসমিসের পুষ্টিগু
প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে সাধারণত থাকে –
- ক্যালরি: প্রায় ৩০০
- কার্বোহাইড্রেট: ৭৯ গ্রাম
- প্রোটিন: ৩ গ্রাম
- ফাইবার: ৪ গ্রাম
- আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি খনিজ
- প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- রক্তশূন্যতা দূর করে – আয়রনের কারণে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়।
- শক্তি যোগায় – উচ্চ ক্যালরি ও প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে ক্লান্তি দূর হয়।
- পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে – ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
- হাড় মজবুত করে – ক্যালসিয়াম ও বোরন হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
- হার্টের সুরক্ষা দেয় – অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- চোখের জন্য উপকারী – ভিটামিন এ দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে – দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে।
কিসমিস দিয়ে জনপ্রিয় রেসিপি
বাংলাদেশে কিসমিস শুধু সরাসরি খাওয়া নয়, বিভিন্ন খাবারেও ব্যবহার হয়।
- বিরিয়ানি, পোলাও, কাবাব
- কেক, পুডিং, বিস্কুট
- ফালুদা, সেমাই, ক্ষীর
- সালাদ ও ফলের ডেজার্ট
কিসমিস সংরক্ষণের নিয়ম
যেহেতু কিসমিস দ্রুত আর্দ্রতা শোষণ করে, তাই সংরক্ষণে সতর্কতা জরুরি।
- শুকনো ও ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে।
- এয়ারটাইট কন্টেইনার ব্যবহার করতে হবে।
- রেফ্রিজারেটরে রাখলে দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
- সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখতে হবে।
কেন কিসমিসের দাম বাড়ছে?
কিসমিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ –
- আন্তর্জাতিক বাজারে আঙুরের দাম বৃদ্ধি।
- ডলার ও আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া।
- পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি।
- চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে, কিন্তু সরবরাহ কম।
শেষকথা
কিসমিস একটি অমূল্য প্রাকৃতিক খাদ্য। এর দাম প্রকারভেদে ভিন্ন হলেও গুণাগুণ সব ক্ষেত্রেই সমান কার্যকর। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ কিসমিস খেলে শরীর সুস্থ থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং মানসিক প্রশান্তি আসে। বাংলাদেশের বাজারে ৬৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা পর্যন্ত কিসমিস পাওয়া যায়। অনলাইনে বা অফলাইনে কেনার আগে অবশ্যই গুণগতমান যাচাই করে নেওয়া জরুরি।