বাংলাদেশে বেকারত্বের হার এখনও উচ্চ, যদিও শিক্ষার হার ধীরে ধীরে বাড়ছে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই চাকরির অভাবে বেকার জীবন কাটাচ্ছে, ফলে বেকারত্ব নিরসনে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের জনগণকে দক্ষ কর্মীতে পরিণত করছে। এর ফলে, দক্ষ শ্রমিকেরা বিদেশে কাজের সুযোগ পাচ্ছে, যা শুধু বেকারত্ব কমাতে নয়, বরং বৈদেশিক আয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশ যেমন ভারত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, কুয়েত ও ওমান, ইত্যাদি দেশে কম খরচে যাওয়া সম্ভব। এই লেখায় আমরা নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বিদেশে কাজ, পড়াশোনা বা ভ্রমণ করতে কম খরচে কোথায় এবং কিভাবে যাওয়া সম্ভব, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কম খরচে বিদেশ যাওয়ার জনপ্রিয় গন্তব্যগুলো
১. ভারত
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত কম খরচে ভ্রমণ ও চিকিৎসা জন্য অন্যতম সেরা গন্তব্য। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সড়ক, রেল এবং আকাশপথে যোগাযোগ সহজলভ্য, তাই খরচও কম পড়ে। সাধারণত, টুরিস্ট ভিসায় ভারতে যেতে ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা লাগে। এছাড়া চিকিৎসার জন্যও ভারত একটি জনপ্রিয় স্থান। বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা ভিসা নিয়ে সহজেই পাড়ি জমানো যায় এবং খরচও তুলনামূলকভাবে কম।
২. সৌদি আরব
সৌদি আরব বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার। অধিকাংশ বাংলাদেশি কর্মী সৌদি আরবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যান। কাজের ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যেতে খরচ হয় প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। এখানে প্রধানত নির্মাণ, সেবাখাত, এবং গৃহকর্মী হিসেবে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। সৌদি আরবের উচ্চ বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অনেক বাংলাদেশির জীবিকা নির্বাহে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৩. মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার। প্রতিদিন প্রায় হাজারো শ্রমিক মালয়েশিয়া পাড়ি জমাচ্ছে। ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় মালয়েশিয়া যেতে সাধারণত ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ হয়। নির্মাণ এবং কৃষিখাতে প্রচুর কর্মসংস্থান রয়েছে, যা বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য বড় সুযোগ।
৪. কাতার
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ কাতারে কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ যাচ্ছেন। কাতার সরকার নিজ উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করে। কাতারে যেতে সাধারণত ৪.৫ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপের কারণে কাতারে প্রচুর পরিমাণ অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ হয়েছে, যা বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
৫. কুয়েত
কুয়েতি দিনার বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান মুদ্রাগুলোর মধ্যে অন্যতম, এবং কুয়েতে বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য শ্রমিকের চাহিদা প্রচুর। কাজের ভিসায় কুয়েতে যেতে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ হয়। এখানে মূলত নির্মাণ, রেস্টুরেন্ট, এবং হোটেল ম্যানেজমেন্টে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
৬. ওমান
ওমানের অর্থনীতি প্রধানত প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল এবং দেশটি বছরে প্রায় ২২ লাখ প্রবাসী শ্রমিক আমদানি করে। বাংলাদেশ থেকে ওমানে কাজের জন্য যেতে সাধারণত ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ হয়। ওমানে মূলত নির্মাণ, গৃহকর্মী এবং পরিষেবা খাতে প্রচুর শ্রমিক প্রয়োজন।
বাংলাদেশ থেকে কম খরচে যাওয়া সম্ভব দেশগুলোর তালিকা
বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেমন সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ওমান ইত্যাদি দেশে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় সহজেই যাওয়া যায়। সাধারণত ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ হয় এই দেশগুলোতে যেতে। এছাড়া টুরিস্ট ভিসায় কম খরচে ভারতের মতো দেশগুলিতে যাওয়া যায়, যেখানে খরচ মাত্র ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে মাল্টা, পর্তুগাল, লিথুনিয়া, এবং বেলজিয়ামেও যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, যেখানে খরচ কিছুটা বেশি হলেও তুলনামূলকভাবে সহনীয়।
ভিসার খরচ ও ভিসার ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের খরচ
বিদেশে যাওয়ার জন্য খরচ মূলত ভিসার ধরন এবং দেশের উপর নির্ভর করে। সাধারণত ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে ইউরোপের কিছু দেশে স্টুডেন্ট ভিসায় কম খরচে যাওয়া সম্ভব। স্কলারশিপ পেলে খরচ আরও কমে আসে, যা ১ থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যেই হয়ে থাকে।
মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশে ভিজিট ভিসায় যেতে খরচ সাধারণত ১ থেকে ২ লাখ টাকা, এবং ইউরোপের স্টুডেন্ট ভিসায় গেলে খরচ ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা পড়ে। গত বছরে তুলনায় চলতি বছরে ভিসার খরচ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই পরিকল্পনা করার আগে বর্তমান খরচ সম্পর্কে জানা জরুরি।
কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ কোন দেশে কত খরচ হবে
বিদেশ ভ্রমণের জন্য কম খরচের একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হলো ভারত। শুধুমাত্র ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় ভারতে ভ্রমণ করা যায়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কাতারও একটি চমৎকার গন্তব্য। কাতারের টুরিস্ট ভিসায় যেতে খরচ পড়ে ১ থেকে ২ লাখ টাকা, এবং কাতারে অনেক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, যা পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়।
শেষকথা
বাংলাদেশ থেকে নিকটবর্তী দেশগুলোতে কম খরচে যাওয়া সম্ভব, যার মধ্যে ভারত অন্যতম। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ওয়ার্ক পারমিট ও টুরিস্ট ভিসায় কম খরচে যাওয়া যায়। তবে সবকিছুই নির্ভর করে ভিসার ধরন এবং গন্তব্য দেশের উপর। কম খরচে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে টুরিস্ট ও স্টুডেন্ট ভিসার খরচ কম হওয়ায় এই ধরনের ভিসায় ভ্রমণ বা পড়াশোনার জন্য যাওয়া বেশ সুবিধাজনক।
বিদেশে কাজের সুযোগ খুঁজতে বা ভ্রমণের পরিকল্পনা করার সময় ভিসা খরচ, যাতায়াতের খরচ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মাথায় রাখা জরুরি। সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির মাধ্যমে বিদেশে কম খরচে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।