ইউরোপের গরিব দেশের তালিকা

ইউরোপ মহাদেশে মোট ৫০টি দেশ রয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ দেশই অর্থনৈতিকভাবে উন্নত এবং উচ্চ জীবনযাত্রার মানে প্রতিষ্ঠিত। তবে কিছু দেশ এখনো মাথাপিছু আয় ও অর্থনৈতিক শক্তিমত্তার দিক থেকে পিছিয়ে আছে। এই দেশের মানুষগুলোর জীবনযাত্রা, জীবনমান এবং সুযোগ-সুবিধা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বেশ ভিন্ন।

এই নিবন্ধে, আমরা ইউরোপের গরিব ও ধনী দেশসমূহের তালিকা, সেনজেন ও নন-সেনজেন দেশগুলোর বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করবো। এই তথ্যের ভিত্তিতে আপনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ইউরোপের গরিব দেশের তালিকা

ইউরোপে কিছু দেশ এখনো অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। এ দেশের মানুষের মাসিক আয় কম এবং মাথাপিছু জিডিপি নিম্নমানের। গড়ে এই দেশগুলোর মানুষের মাসিক আয় প্রায় ২৫০ ইউরোর কাছাকাছি, এবং মাথাপিছু আয় বা জিডিপি মাত্র ৪,৫০০ মার্কিন ডলার। এই তালিকায় যে দেশগুলো রয়েছে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

ইউরোপের গরিব দেশগুলোর তালিকা (জিডিপি অনুযায়ী)

দেশমাথাপিছু জিডিপি (মার্কিন ডলার)
মলদোভা (Moldova)৪,৫০০ ডলার
ইউক্রেন (Ukraine)৪,৮০০ ডলার
আলবেনিয়া (Albania)৬,১০০ ডলার
কসোভো (Kosovo)৬,২০০ ডলার
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা (Bosnia and Herzegovina)৬,৬০০ ডলার
নর্থ মেসিডোনিয়া (North Macedonia)৬,৯০০ ডলার
বেলারুশ (Belarus)৭,২০০ ডলার
মন্টেনেগ্রো (Montenegro)৮,৪০০ ডলার
সার্বিয়া (Serbia)৮,৮০০ ডলার
জর্জিয়া (Georgia)৯,২০০ ডলার

মলদোভা ইউরোপের সবচেয়ে গরিব দেশ হিসেবে চিহ্নিত, যার মাথাপিছু জিডিপি মাত্র ৪,৫০০ মার্কিন ডলার। এছাড়াও ইউক্রেন এবং আলবেনিয়া অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে।

ইউরোপের ধনী দেশের তালিকা

ইউরোপের বেশিরভাগ ধনী দেশ সেনজেন ভুক্ত অঞ্চলের মধ্যে পড়ে এবং এই দেশগুলোর মাথাপিছু জিডিপি অনেক বেশি। ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ হলো লুক্সেমবার্গ, যার মাথাপিছু আয় বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ। সেনজেন অঞ্চলের ধনী দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা, উচ্চমানের জীবনযাত্রা এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা এই দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শীর্ষে অবস্থান করতে সাহায্য করেছে।

ইউরোপের ধনী দেশগুলোর তালিকা (জিডিপি অনুযায়ী)

দেশমাথাপিছু জিডিপি (মার্কিন ডলার)
লুক্সেমবার্গ (Luxembourg)১,২৭,৬৭৩ ডলার
নরওয়ে (Norway)৯৯,১৬৬ ডলার
আয়ারল্যান্ড (Ireland)৯৮,৫২৬ ডলার
সুইজারল্যান্ড (Switzerland)৮৩,৮৩২ ডলার
আইসল্যান্ড (Iceland)৭৪,২৭৮ ডলার
ডেনমার্ক (Denmark)৬৩,৬৪৫ ডলার
সুইডেন (Sweden)৬০,৪৬৪ ডলার
নেদারল্যান্ডস (Netherlands)৫৮,০৬১ ডলার
অস্ট্রিয়া (Austria)৫৫,২১৮ ডলার
ফিনল্যান্ড (Finland)৫৪,৯৭৪ ডলার

লুক্সেমবার্গ এবং নরওয়ে ইউরোপের শীর্ষ ধনী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম, এবং এই দেশগুলোর উন্নত অর্থনৈতিক কাঠামো এবং শক্তিশালী শিল্প খাতের কারণে তাদের উচ্চ মাথাপিছু আয় রয়েছে।

ইউরোপের সেনজেন দেশগুলোর তালিকা

সেনজেন অঞ্চল ইউরোপের এমন একটি এলাকা যেখানে অভ্যন্তরীণ সীমান্তে অবাধ চলাচল রয়েছে। অর্থাৎ, সেনজেন ভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। এই সুবিধা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম, পর্যটন এবং সংস্কৃতির আদান-প্রদানে বিশাল অবদান রেখেছে।

বর্তমানে ইউরোপের মোট ২৭টি দেশ সেনজেন ভুক্ত। এই দেশগুলো একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সংযোগ রক্ষা করে চলছে।

সেনজেন ভুক্ত দেশসমূহ

  • অস্ট্রিয়া (Austria), বেলজিয়াম (Belgium), চেক প্রজাতন্ত্র (Czech Republic), ডেনমার্ক (Denmark), এস্তোনিয়া (Estonia), ফিনল্যান্ড (Finland), ফ্রান্স (France), জার্মানি (Germany), গ্রীস (Greece)
  • হাঙ্গেরি (Hungary), আইসল্যান্ড (Iceland), ইতালি (Italy), লাতভিয়া (Latvia), লিথুয়ানিয়া (Lithuania), লুক্সেমবার্গ (Luxembourg), মাল্টা (Malta), নেদারল্যান্ডস (Netherlands), নরওয়ে (Norway)
  • পোল্যান্ড (Poland), পর্তুগাল (Portugal), স্লোভাকিয়া (Slovakia), স্লোভেনিয়া (Slovenia), স্পেন (Spain), সুইডেন (Sweden), সুইজারল্যান্ড (Switzerland), লিচেনস্টাইন (Liechtenstein)

ইউরোপের নন-সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা

ইউরোপে মোট ৫০টি দেশের মধ্যে ২৩টি দেশ সেনজেন অঞ্চলের বাইরে। অর্থাৎ এই দেশগুলো নন-সেনজেন দেশ। এই দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য ভিসার প্রয়োজন হয়, যা সেনজেন দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সাধারণত এই দেশগুলো সেনজেন অঞ্চলের বাইরে থাকায় এখানকার মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে।

নন-সেনজেন দেশসমূহ

  • আলবেনিয়া (Albania), আর্মেনিয়া (Armenia), আযারবাইজান (Azerbaijan), বেলারুশ (Belarus), বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা (Bosnia and Herzegovina), বুলগেরিয়া (Bulgaria)
  • ক্রোয়েশিয়া (Croatia), সাইপ্রাস (Cyprus), জর্জিয়া (Georgia), আয়ারল্যান্ড (Ireland), কসোভো (Kosovo), ম্যাসেডোনিয়া (North Macedonia), মোলদোভা (Moldova)
  • মন্টেনেগ্রো (Montenegro), রোমানিয়া (Romania), রাশিয়া (Russia), সার্বিয়া (Serbia), তুরস্ক (Turkey), ইউক্রেন (Ukraine), ইউনাইটেড কিংডম (United Kingdom)

শেষ কথা

ইউরোপের দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা বিভিন্ন রকম। কিছু দেশ যেমন উন্নত এবং শক্তিশালী অর্থনীতির অধিকারী, তেমনি কিছু দেশ এখনো দরিদ্র এবং উন্নতির দিকে রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা এই গরিব দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top